রহস্যজনকভাবে যানবাহনের গতি কমে যায় এই কালী মন্দিরের সামনে, চেনেন এই মন্দির?
কারও মতে তিনি জাগ্রত কালী মা, কারও মতে অকালবোধনের শক্তি। তাঁকে ঘিরে আজও বহু অলৌকিক ঘটনার কথা স্থানীয় বাসিন্দাদের মুখে মুখে ফেরে। তিনি কুলপুকুরের জাগ্রত কালী মা। আজও তাঁর মন্দিরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় যানবাহনের গতি রহস্যময়ভাবে কমে যায়।
আজকাল ওয়েবডেস্ক: কারও মতে তিনি জাগ্রত কালী মা, কারও মতে অকালবোধনের শক্তি। তাঁকে ঘিরে আজও বহু অলৌকিক ঘটনার কথা স্থানীয় বাসিন্দাদের মুখে মুখে ফেরে। তিনি কুলপুকুরের জাগ্রত কালী মা। আজও তাঁর মন্দিরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় যানবাহনের গতি রহস্যময়ভাবে কমে যায়। গভীর রাতে জাতীয় সড়কের ওপর মা দেখা দেন শিশুকন্যা রূপে।
উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা থানার কুলপুকুরের কালী আজও ভক্তের কাছে জাগ্রত মা নামেই পরিচিত। মায়ের মন্দির ঘিরে অসংখ্য লোককথা আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। দেশভাগের পর ওপার বাংলা থেকে ছিন্নমূল মানুষ পিলপিল করে নতুন বাংলায় ঠাঁই নিয়েছিলেন। যশোর, খুলনা ও বরিশালের বহু উদ্বাস্তু মানুষ কাঁটাতারের এপারে বনগাঁ, গাইঘাটা, হাবড়া ও মধ্যমগ্রামের বিভিন্ন রিলিফ ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কথিত আছে, বরিশালের এক অচিন গাঁয়ের বাসিন্দারা সকলেই যখন দেশ ছাড়ছেন, পূজিত কালী মা তখন হাত নেড়ে তাঁদের পিছু ডাকলেন। মা তাঁদের বললেন, 'তোরা সবাই চলে যাচ্ছিস। আমাকে সঙ্গে নিয়ে যাবি না?' বাসিন্দারা তখন থমকে গেলেন। সকলেই পরস্পরের মুখের দিকে চেয়ে আছেন। কালী মায়ের মূর্তি সঙ্গে করে এতটা পথ যাওয়া সম্ভব নয়। তাই, মায়ের পা ছুঁয়ে তাঁরা শপথ করে এসেছিলেন, নতুন দেশে পৌঁছে মন্দির গড়ে তাঁর তাঁর পুজো শুরু করবেন। বরিশাল থেকে সেদিন আনা হয়েছিল মায়ের ঘট ও থানের মাটি। বহু পথ হেঁটে ক্লান্ত উদ্বাস্তুরা সেদিন গাইঘাটায় যশোর রোডের পাশে একটি পুকুরপাড়ের কুলগাছের তলায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানেই মায়ের ঘট ও মাটি দিয়ে একচালা মন্দির তৈরি করা হয়েছিল। শুরু হয়েছিল পুজোপাঠ। তারপর কেটে গিয়েছে বহু বছর। কুলগাছ ও পুকুরপাড়ের নাম অনুসারে কালী মায়ের মন্দিরের নামকরণ হয় কুলপুকুর মন্দির (Kupukur Kali Mandir)। সে সব আজ ইতিহাস।
প্রতিবছর ফাল্গুনী অমাবস্যায় মায়ের অকালবোধন হয়। মন্দিরের গা ঘেঁষে চলে গিয়েছে ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সড়ক যশোর রোড। আধুনা তা ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক নামে পরিচিত। কুলপুকুর মন্দিরের কালী মাকে নিয়ে বহু লোককথা শোনা যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, মন্দিরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আজও যানবাহনের গতি রহস্যময়ভাবে কমে যায়। জাতীয় সড়ক ধরে যাতায়াতের পথে দূরপাল্লার গাড়ির চালকরা গভীর রাতে রাস্তার ওপরে কোনও শিশুকন্যাকে দেখেছেন। দেখেছেন বুড়িমা রূপে কালী মাকেও। হাত নেড়ে তাঁরা গাড়ি আস্তে চালানোর কথা বলছেন। কত লোক দেখেছে! ফাল্গুনী অমাবস্যায় দেবীর অকালবোধনের পুজো শেষে বাড়ি ফেরার পথে পুরোহিতরা অনেকেই পথ ভুল করে ফেলেন। নির্জন মাঠের মধ্যে তাঁরা ঘুরপাক খান। মা তখন তাঁদের পথ দেখিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেন।
বাসিন্দাদের বিশ্বাস, কুলপুকুরের কালী মা অত্যন্ত জাগ্রত দেবী। তিনি ভক্তের মনস্কামনা পূর্ণ করেন। মা কখনও কাউকে খালি হাতে ফেরার না। তাই, আজও বিভিন্ন তিথিতে মায়ের মন্দিরে হাজার হাজার ভক্তের ভিড় জমে যায়। কুলপুকুর কালী মন্দির কমিটির সম্পাদক দীপেশ দে বলেন, 'আমাদের মন্দিরের কালী মা অত্যন্ত জাগ্রত দেবী। তাঁর কাছে মানত করলে মা কখনও কাউকে খালি হাতে ফেরাননি। তাই, মায়ের মন্দিরে আজও দেশ-বিদেশের বহু ভক্ত এসে মানত করেন।