ইতিহাস আর ঐতিহ্যের মিশেলে আজও উজ্জ্বল আমডাঙার করুণাময়ী কালী
মা কালীর বন্দনা মানেই শক্তির আরাধনা। আর তাতে যদি মিশে থাকে ইতিহাসের ছোঁয়া, ধর্মপ্রাণ মানুষকে তখন আর আটকে রাখা যায় কি? তাই, ইতিহাস আর ঐতিহ্যের মিশেলে আজও উজ্জ্বল উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙার করুণাময়ী কালী।
আজকাল ওয়েবডেস্ক: মা কালীর বন্দনা মানেই শক্তির আরাধনা। আর তাতে যদি মিশে থাকে ইতিহাসের ছোঁয়া, ধর্মপ্রাণ মানুষকে তখন আর আটকে রাখা যায় কি? তাই, ইতিহাস আর ঐতিহ্যের মিশেলে আজও উজ্জ্বল উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙার করুণাময়ী কালী। পায়ে পায়ে মন্দিরের পুজো আজ ৪৬৪ বছরে পড়েছে। ইতিহাসের পাতায় আমডাঙার করুণাময়ী কালীমন্দির নিয়ে অনেক কথা লেখা আছে। মন্দিরের পরিচালন কমিটির সম্পাদক অমলচন্দ্র ঘোষ জানিয়েছেন, মুঘল সম্রাট আকবরের দূত মানসিংহ ১৫৬১ সালে আমডাঙা কালীমন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন। আকবরের সৈনদল পরপর দু’বার যশোরের বারো ভুঁইয়া প্রতাপাদিত্যের কাছে পরাজিত হন।
সম্রাটের বিশ্বাস ছিল, যশোরের যশোরেশ্বরী মন্দিরে পুজো দিয়ে প্রতাপাদিত্য যুদ্ধ নামতেন বলে তিনি জয়লাভ করতেন। যশোরের বারো ভুঁইয়াকে জব্দ করতে বাদশা আকবর মানসিংহকে দায়িত্ব দেন। মানসিংহ প্রথমেই যশোরেশ্বরী মন্দির থেকে বিগ্রহ সরিয়ে দেন। প্রতাপাদিত্য সে কথা জানতে পেরে মন্দিরের পূজারী রামানন্দ গিরি গোস্বামীকে নির্বাসিত করেন। সে যুদ্ধে প্রতাপাদিত্য শেষপর্যন্ত পরাজিত হন। মানসিংহ যুদ্ধে জয়লাভ করে যশোরেশ্বরীর মূর্তি রাজস্থানের অম্বরে স্থাপন করেন। অন্যদিকে, নির্বাসিত রামানন্দ আমডাঙার শুখাবতী (সুটি) নদীর ধারে জঙ্গলে পলায়ন করেন। মানসিংহ স্বপ্নাদেশ পান, মায়ের শিষ্য রামানন্দ উন্মাদ অবস্থায় সুটি নদীর তীরে রয়েছেন।
রামানন্দকে উন্মাদ অবস্থা থেকে শান্ত সাধন মার্গে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য মানসিংহ কষ্টিপাথর দিয়ে কালীর শান্ত মূর্তি নির্মাণ করেন। ১৫৬১ খ্রিস্টাব্দে বিগ্রহ তৈরি হওয়ার পর আমডাঙা কালীমন্দিরে পুজোর সূচনা হয়। আমডাঙা মন্দিরে পূজিত হয় কালীর শান্ত মূর্তি। মূর্তি রয়েছে মন্দিরের দোতলার ঘরে। মন্দির ঘিরে পঞ্চদশ বা ১৫টি শিবমন্দির রয়েছে। মন্দিরের মহন্তরা মারা যাওয়ার পর তাঁদের সমাধিস্থলের ওপরে শিবমন্দিরগুলো গড়ে উঠেছে। অমলবাবু বলেন, 'সাড়ে চারশো বছরেরও বেশি আগে ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে আমাদের করুণাময়ী কালী মায়ের মন্দির গড়ে উঠেছিল। জাগ্রত মায়ের কাছে বহু মানুষ মানত করেন। রাজ্যের সীমানা ছাড়িয়ে দেশ-বিদেশের ভক্তরা মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। জৌলুশ নয়, ইতিহাস আর ঐতিহ্যের মেলবন্ধনে আমাদের পুজো আজও উজ্জ্বল হয়ে আছে।'