'আমিই ফাটাকেষ্ট ', পুজোয় 'বাওয়াল' নিয়ে বলতে গিয়ে গোপন কথা বললেন ভরত কল

Bharat Kaul: দুর্গাপুজোয় কোন ব্যাপারটা আজকাল বড্ড মিস করেন তিনি? ছোটবেলার পুজোর স্মৃতি তাঁর কাছে ঠিক কেমন? আজকাল ডট ইন-এর কাছে পুজো নিয়ে মুখ খুললেন 'অনেক বাঙালির থেকে বেশি বাঙালি' ভরত কল।

Bengali popular actor Bharat Kaul talks about his childhood memories of Durga Puja ENT
ভরত কল

রাহুল মজুমদার

দুর্গাপুজোয় কোন ব্যাপারটা আজকাল বড্ড মিস করেন তিনি?  ছোটবেলার পুজোর স্মৃতি তাঁর কাছে ঠিক কেমন? আজকাল ডট ইন-এর কাছে পুজো নিয়ে মুখ খুললেন 'অনেক বাঙালির থেকে বেশি বাঙালি' ভরত কল। 


অভিনেতা হিসাবে ৩০ বছরের বেশি পথ পেরিয়ে এসেছেন অভিনেতা ভরত কল। দুধসাদা গায়ের রং, টিকালো নাক, মেদহীন চেহারা। ইন্ডাস্ট্রির শুধুই 'নামজাদা ভিলেন' এখন আর নন তিনি। পাশাপাশি নায়কের 'ভাল বাবা'ও। জনপ্রিয়তা তাঁর আড্ডাবাজ তকমাকে সরাতে পারেনি, যাঁরা তাঁর সঙ্গে গল্পের আসরে বসেছেন, তাঁরা জানান। ভরত নিজেই বলেন, "জন্মসূত্রে আমি কাশ্মিরী, ব্যাস ওটুকুই! আমি মনেপ্রাণে বাঙালি। ডাল-ভাত, মাছ চেটেপুটে খাওয়া বাঙালি। আমার এই যে আড্ডা মারার স্বভাব, বাঙালি বলেই তো নাকি! সুতরাং, দুর্গাপুজো নিয়ে আর পাঁচজন বাঙালির যা আবেগ তার থেকে এক বিন্দু কম আবেগ নয় আমার। পুজো এলে আজও আমি মনে মনে ছোটবেলায় ফিরে যাই।  কী হুল্লোড় না করতাম। তখন মনে হয়, সময়টাই একটু অন্যরকম ছিল...দেখুন, লেক গার্ডেন্সে আমার জন্ম, বড় হওয়া। পাড়ার সংস্কৃতি আমার কৈশোরের স্মৃতিতে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে। আজও আমি পাড়ার ছেলে। তখন একটু বড় হয়েছি, পুজোর ছুটি মানেই নরম রোদ গায়ে মেখে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা, রাস্তায় হেঁটে যাওয়া সুন্দরীদের দেখা"। 

"পুজোয় সুন্দরীদের দেখব না তা কি হয়? ওই বয়সের ছেলেদের থেকে তো আমি আলাদা ছিলাম না। তবে কোনওদিন কোনও পাড়ার মেয়ে কিংবা পুজোয় আমাদের পাড়ায় বেড়াতে আসা কোনও মেয়ে টিটকিরি শোনেননি অথবা অশ্রাব্য মজার কথার কোনও অংশ হননি। কেন? ওই যে পাড়ার সংস্কৃতি। পাড়ার অনাত্মীয় বাড়ির মানুষেরাও ছিলেন পরিবারের অংশ। আর সন্ধ্যেবেলায় ম্যাডক্স! বাপরে বাপ। কী ভিড় যে হত এখনকার ছেলেমেয়েদের বলে বিশ্বাস করবে না। দল বেঁধে  সুন্দরীরা আসছে, বন্ধু বান্ধবেরা বিকেল থেকেই সেজেগুজে ম্যাডক্স চত্বরে বসে পাঁপরভাজা, ঘুগনি খেতে খেতে আড্ডা মারছে, আজও চোখ বুজলে এই দৃশ্য স্পষ্ট ভেসে ওঠে। আসলে তখন তো এত ঘোরার জায়গা ছিল না পুজোয়। ম্যাডক্স ছিল আমার অন্যতম আকর্ষণ। বন্ধুরা সবাই মিলে টাকা দিয়ে খাওয়া দাওয়া হত, তবে সেটা আহামরি কিছু নয়। পুজোয় সারাদিন একসঙ্গে বসে আড্ডাটা ছিল আসল। এরপর আরও একটু বড় হলাম। পকেটে টুকটাক টাকা আসছে। পুজোয় পার্ক স্ট্রিট যাওয়া সেই প্রথম। নয়ের দশকের শুরু দিকে। চৌরঙ্গীর ওই জনপ্রিয় পাঁচতারা হোটেলে তখন ডিজে ব্যাপারে শুরু হয়েছে। তখনকার দিনে যা প্রায় কল্পনাতীত। একবার পুজোতে সেখানেও বন্ধুরা মিলে হানা দিয়েছিলাম। মনে হয়েছিল পুরো কল্পনার জগৎ"। 

"বলব, ভাসানের কথা। দশমীতে পাড়ার প্যান্ডেলের প্রতিমা বিসর্জনের সময় পাড়ার ছেলেরা মিলে যেতাম বাবুঘাট।  রাস্তায় অল্প নাচতাম, সিঁদুরখেলা হত, সঙ্গে বাওয়াল। ওরে বাওয়া, কী ঝামেলা, কী ঝামেলা! কত মারপিট করেছি। তখন ভাবটা এমন ছিল, কলকাতায় কে ফাটাকেষ্ট? আমি ফাটাকেষ্ট, আমরাই ফাটাকেষ্ট!  তবে সেসবের মধ্যেও মজা থাকত। এখন ভাবলে মনটা একটু ফাঁকা ফাঁকাই লাগে। বড্ড মিস করি সেসব। 

সামান্য থেমে  বলিউডে চুটিয়ে কাজ করা এই বাঙালি অভিনেতার মুখে ভেসে এল আক্ষেপ, "এখন তো এত আয়োজন, কত কার্নিভ্যাল, আরও বেশি শব্দ-আলো। পুজোর প্রাণটা কোথায় যেন একটু মিসিং...পাড়া ব্যাপারটাও একটু একটু করে হারিয়ে গেল প্রায়। এটাই বড্ড মিস করি। আমার পুরনো পাড়াটাকে মিস করি"।