উজ্জ্বল বাংলার নারীশক্তি, ভিনরাজ্যে পাড়ি দিলেন হাবড়ার মহিলা ঢাকিরা
যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে। প্রাচীন বাংলা প্রবাদটি ফের সত্যি করেছেন বাসন্তী, রুমা, মিতা, সুলতা ও শম্পারা। তাঁদের কেউ বিড়ি বাঁধেন। কেউ বা বাবুদের বাসায় দিনভর পরিচারিকার কাজ করেন।
বাপি মণ্ডল
যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে। প্রাচীন বাংলা প্রবাদটি ফের সত্যি করেছেন বাসন্তী, রুমা, মিতা, সুলতা ও শম্পারা। তাঁদের কেউ বিড়ি বাঁধেন। কেউ বা বাবুদের বাসায় দিনভর পরিচারিকার কাজ করেন। রুটিরুজির টানে কাউকে আবার আয়ার কাজও করতে হয়। কিন্তু সেটাই তাঁদের শেষ পরিচয় নয়। প্রান্তিক ওই মহিলাদের হাতেই আজ বেজে উঠেছে দশভুজার আগমনী বার্তা। ভিনরাজ্যের দুর্গাপুজোয় এবার উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া-অশোকনগরের মহিলা ঢাকিদের ঢাকের বোল শোনা যাবে। ইতিমধ্যে তাঁরা পুজোমণ্ডপের উদ্দেশে পাড়িও দিয়েছেন।
বৃহত্তর হাবড়ার মছলন্দপুর রেল কলোনির প্রখ্যাত ঢাকি শিবপদ দাস কয়েক বছর আগে পাড়ার কয়েকজন মহিলাকে ঢাক বাজানোর তালিম দেওয়া শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বাসন্তী বিশ্বাস, রমা বিশ্বাস, মিতা বিশ্বাস, সুলতা মালী ও শম্পা দাস-সহ আরও কয়েকজন। তিনি দেখলেন, মহিলাদের হাতেও ঢাকের বোল বেশ লাগছে। পরে আরও কয়েকজন ওই দলে সামিল হলেন। শিবপদ ওই মহিলাদের নিয়ে গড়ে তুললেন মোহিনী কাহারবা ঢাকি সমিতি। প্রথম দিকে আশপাশের কয়েকটি সর্বজনীন দুর্গোৎসবে বাসন্তী-শম্পারা ঢাক বাজানো শুরু করলেন। দর্শনার্থীরা তাঁদের বেশ তারিফ করলেন। তারপর কলকাতার বড় পুজো উদ্যোক্তাদের কাছ থেকেও ডাক আসা শুরু হল। আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। গত কয়েক বছরে হাবড়ার মহিলারাই রাজ্যের বেশ কয়েকটি বড় পুজোমণ্ডপে ঢাকের বোল শুনিয়েছেন।
অশোকনগরের কয়াডাঙা নট্টপাড়ার বাসিন্দা আরও এক প্রখ্যাত ঢাকি সজল নট্ট। তিনিও প্রান্তিক মহিলাদের নিয়ে গড়ে তুললেন আরও একটি ঢাকিদল। ওই মহিলাদের হাতেও বেজে উঠল আগমনীর বাদ্যি। চলতি বছর হাবড়া-অশোকনগর মিলিয়ে শতাধিক মহিলা ঢাকি ভিনরাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন। তাঁরা দিল্লি, মুম্বই, অসম ও বেঙ্গালুরু-সহ বেশ কয়েকটি শহরের সর্বজনীন পুজোমণ্ডপে ঢাক বাজাবেন। তাঁদের হাতেই দেবীদুর্গার বোধনের ধ্বনি বেজে উঠেছে।
মোহিনী কাহারবা ঢাকি সমিতির কর্ণধার শিবপদ বলেন, 'বাংলার নারীশক্তি সুদূর অতীতকাল থেকে গোটা বিশ্বে প্রতিভার পরিচয় রেখেছে। কোনও কিছুতে তাঁরা আর পিছিয়ে নেই। মহিলারাও ঢাক বাজাতে পারেন। আমাদের মেয়েরা তা আগেই প্রমাণ করেছেন। তাঁরা এবার কলকাতার পাশাপাশি অন্য রাজ্যেও ঢাক বাজানোর বায়না পেয়েছেন। ইতিমধ্যে তাঁরা পাড়িও দিয়েছেন।'
অশোকনগরের সজল নট্ট বলেছেন, 'মেয়েরা সব কিছুতেই এখন সমান দায়িত্ব পালন করছেন। উমার বন্দনায় তাঁরা আর পিছিয়ে থাকবেন কেন? আমাদের দলের মেয়েরা ঢাক বাজাতে এবার দিল্লি, মুম্বই-সহ ভিনরাজ্যের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েছেন।' বাসন্তী, রুমা ও সুলতাদের এক হাতে আজ ঘরকন্না, সংসারের জোয়াল। অন্য হাতে ঢাকের কাঠি। এক উমা পিতৃগৃহে ফিরছেন। হাবড়ার উমারা তখন কাঁধে ঢাক নিয়ে ঘর ছাড়ছেন। সংসার সংগ্রামে তাঁরাও যে অর্ধেক আকাশ।