রাজ আমল থেকে একই কাঠামোতে গড়ে উঠছেন কোচবিহারের মদনমোহন ঠাকুর বাড়ির কাঠামিয়া দুর্গা
রাজনগর কোচবিহারে মহারাজাদের কুলদেবতা মদনমোহন ঠাকুরবাড়িতে রাজ প্রথা মেনেই পুজিত হন কাঠামিয়া দুর্গা পুজো। একই কাঠামোতে ফি বছর মা তার পরিবারকে নিয়ে গড়ে ওঠেন।
দিব্যেন্দু ভৌমিক: রাজনগর কোচবিহারে মহারাজাদের কুলদেবতা মদনমোহন ঠাকুরবাড়িতে রাজ প্রথা মেনেই পুজিত হন কাঠামিয়া দুর্গা পুজো। একই কাঠামোতে ফি বছর মা তার পরিবারকে নিয়ে গড়ে ওঠেন । সময়টা ৪ মে, ১৮৯১ সাল। কোচবিহারের তদানীন্তন মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ ভূপ বাহাদুরের উপস্থিতিতে মহাসমারহে বৈদিক মন্ত্র চারণ ও উলুধ্বনির মধ্যে দিয়ে বর্তমানের মদনমোহন মন্দিরটির উদ্বোধন করেন রাজমাথা নিশিময় দেবী।
দূরে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা করে অবলোপন করেন মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ। কেননা ইতিমধ্যেই তিনি ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষিত। কয়েক বছর পর দুর্গা পুজোর জন্য বর্তমান কাঠামিয়া মন্দিরটি নির্মিত হয়। এখানেই হয় কাঠামিয়া দুর্গা পুজো। এখন প্রশ্ন হল কোচবিহারের মদনমোহন বাড়ির দুর্গা পুজোকে কাঠামিয়া দুর্গা পুজো কেন বলা হয়? ঐতিহাসিক ড: নৃপেন্দ্রনাথ পাল বলেন, ‘কোচবিহার জেলায় প্রথম কোন পুজোয় প্রতিবছর একটি কাঠামোতে দুর্গা পুজো হয়, সেটা মদনমোহন বাড়িতে। দশমীর পর সেই কাঠামো ফিরে যায় ডাঙরাই মন্দিরে। পরের বছর ওই কাঠামোতেই আবার মা ও তার সন্তানরা গড়ে ওঠেন’।
শুধু নামেই নন, পুজোর আচারেও কাঠামিয়া পুজো ভিন্নতার পথ ধরে চলছে যুগ যুগ ধরে ।যেমন ষষ্ঠী পুজোর দিন বরণের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় মায়ের পুজো। ষষ্ঠীর সকালে চারটি বেলকে শোধন করে যথাযথ আচারের মধ্যে দিয়ে পাঠানো হয় শহর ছাড়িয়ে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে বানেশ্বরের শিব মন্দিরে। সেখানে বিভিন্ন ক্রিয়াকর্মের পর বিকেলের মদনমোহন বাড়িতে বেলগুলো ফেরত আসে বাকি দুটো বেল পাঠিয়ে দেওয়া হয় দেবীবাড়িতে বড় দেবীর মন্দিরে ।
দুই মন্দিরেই মায়ের দক্ষিণ পাশে বেলগুলো রেখে লাল কাপড় ও সিঁদুরের সজ্জিত করা হয়। সেই সঙ্গে ন’টি গাছ যেমন - কলা, বেল, অশোক, জয়ন্তী, আদা ,কচু ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা হয় নবপত্রিকা। অন্যান্য পুজোর সঙ্গে অনেকটাই ভিন্নতার ছোঁয়া আছে কাঠামিয়া পুজোয়। সাধারণত একটি ঘট স্থাপন করে তাতে সপ্তমী, অষ্টমী বা নবমী পুজো সাঙ্গ করা হয়। কিন্তু কাঠামিয়া দুর্গাপুজোতে প্রতিদিনই নতুন করে ঘর স্থাপন করা হয়।
এক আবেগ মেদুর পরিমণ্ডলে রাজ আমল থেকে কোচবিহার মদনমোহন ঠাকুরবাড়িতে কাঠামিয়া দুর্গাপূজা হয়ে আসছে মহাসমারোহে। মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্রাহ্মণদের নিয়ে এসেছিলেন মদন মোহন মন্দিরে। যেমন কৌনজী ব্রাহ্মণ খাগোপতি মিশ্র বিগত ২২ বছর ধরে কাঠামিয়া দুর্গাপুজো করে আসছেন। কোচবিহারের মহারাজাদের কুলোদেবতা মদনমোহন ঠাকুর বাড়ির কাঠামিয়া পুজোর বিবরণ দিতে গিয়ে বহু অতিত হাতড়ে আবেগে বিহল হয়ে পড়েন সত্তুর ঊর্ধ বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ খাগপতি। চোখের কোনগুলি ওর নিজের অজান্তেই চিকচিক করে ওঠে। বেরিয়ে আসে সগত উক্তি, ‘মা আসছেন’।