কোথাও ছোটা ভীম আবার কোথাও গৌতম বুদ্ধ, জগদ্ধাত্রী পুজোয় সোলায় সাজছে চন্দননগর
জগদ্ধাত্রী প্রতিমা মানেই সোলার অঙ্গসজ্জ্বা। বিশাল প্রতিমা। আপাদমস্তক সোলার নিখুঁত কাজে ঢাকা। বর্তমানে সেই সোলার সাজেও লেগেছে থিমের ছোঁয়া।
মিল্টন সেন,হুগলি: জগদ্ধাত্রী প্রতিমা মানেই সোলার অঙ্গসজ্জ্বা। বিশাল প্রতিমা। আপাদমস্তক সোলার নিখুঁত কাজে ঢাকা। বর্তমানে সেই সোলার সাজেও লেগেছে থিমের ছোঁয়া। ফলে চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী প্রতিমার আকর্ষণ মুগ্ধ করেছে রাজ্যের পাশাপাশি বিদেশি দর্শনার্থীদের। আর সেই লক্ষ্যেই প্রাচীন ফরাসডাঙায় প্রতিমার অঙ্গসজ্জ্বায় সোলার সাজে থিম বৈচিত্র্য বেড়ে চলেছে ক্রমশই। ফলে দিনরাত এক করে কাজ করে চলেছেন বর্ধমান জেলার বনকাপাসি থেকে চন্দননগরে আসা শয়ে শয়ে সোলা শিল্পীরা। এখন তাঁদের কাছে দম ফেলার অবকাশ নেই। তাঁরা ব্যস্ত মণ্ডপে নতুন শিল্পকলা ফুটিয়ে তুলতে। সাধারণত চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো মানেই নানান আলোর জাদু। সঙ্গে নিখুঁত সোলার সাজে সাবেক সুউচ্চ প্রতিমা বরাবরই দর্শনাথীদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ। তাই চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রসার বর্তমানে জেলা, রাজ্য, দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে পৌঁছেছে। তাই বিগত কয়েক বছর ধরে পুজোর দিনগুলিতে বিদেশি পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়েছে গঙ্গা লাগোয়া প্রাচীন এই শহরে। এ বছর জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রস্তুতি প্রায় শেষ লগ্নে এসে পৌঁছেছে।
শুধু চন্দননগর নয়, পূজা হয় সংলগ্ন মানকুন্ডু এবং ভদ্রেশ্বরে। এই তিন এলাকা মিলিয়ে কম-বেশি ২৫০ টি জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। যার ১৭৭ টি পূজো চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির অধীনে। আর এই সমস্ত পুজোর অধিকাংশই বড় প্রতিমা এবং সোলার সাজ ও অলঙ্কারে ভূষিত। বিগত কয়েক বছর ধরে এই সোলার সাজে অভিনবত্বের ছোঁয়া নজরে পড়ছে। সোলা শিল্পীদের নৈপুণ্যতায় বিভিন্ন বারোয়ারীতে পুজোর থিম ভাবনার সঙ্গে জগদ্ধাত্রী প্রতিমার অঙ্গসজ্জার অপূর্ব মেল বন্ধন ঘটেছে। প্রতিমার রূপে ফুটে উঠেছে থিমের বৈচিত্র্য। এবারেও খামতি নেই, জোর প্রস্তুতি চলছে। চন্দননগরের অলিগলিতে কাটোয়ার বনকাপাসি গ্রাম থেকে আসা শয়ে শয়ে শিল্পী দিন-রাত কারুকাজ তৈরী করতে ব্যস্ত। মা জগদ্ধাত্রীর সোলার সাজে কোথাও ফুটে উঠছে মা দূর্গার সঙ্গে লক্ষী, সরস্বতি, কার্তিক গনেশ। কোথাও আবার নজরে পরবে নিখুঁত রাশি চক্র। আবার সোলার তৈরি থিমের সাজে মহিষাসুরমর্দিনী নিঃসন্দেহে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করবে। এই প্রসঙ্গে চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির অন্যতম শুভজিৎ সাউ জানিয়েছেন, বিগত ৪ বছর ধরে মায়ের অঙ্গসজ্জ্বায় সোলার সাজে থিমবৈচিত্র্যের প্রভাব বাড়তে শুরু করেছে। সোলার সাজে ফুটে উঠেছে মহিষাসুরমর্দিনী, মহাভারত, রামায়ণ, পুরাণের বিভিন্ন কাহিনী, ছোটা ভীম, গৌতম বুদ্ধের জীবন কাহিনী ইত্যাদি।
এবারে দেবী দূর্গা নিয়ে জগদ্ধাত্রী প্রতিমার সোলার সাজে থিম লালবাগান সার্বজনীনের। উদ্যোক্তা কৌস্তভ দত্ত বলেছেন, সোলার সাজ চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর ঐতিহ্য। এই সাজের মাধুর্য দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। তাই তাঁরা সোলার সাজকেই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে চলতে চান। এ বছর উর্দি বাজারে জগদ্ধাত্রী প্রতিমার অঙ্গসজ্জায় সোলার মহিষাসুরমর্দিনী থিম নজরে পরবে। বাগবাজার চৌমাথা সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজোয় এবারে সোলার মানুষের রাশিচক্রের থিমের উপর প্রতিমার সাজ। সোলা শিল্পী দিলীপ ঘোষ বলেছেন, প্রথাগত সাজের পাশাপাশি অঙ্গসজ্জায় থিমের কাজও ক্রমশ বেড়ে চলেছে। এ বছর লালবাগানে যেমন দূর্গার থিম, ফটক গোড়ায় তেমনি শিবের মাথায় জল ঢালা নিয়ে ইত্যাদি নানান মণ্ডপে সোলার কাজ তাঁরাই তৈরি করছেন। আগের তুলনায় চন্দননগরে বাজেট অনেকটাই বেড়েছে। কয়েক গুণ বেড়েছে কাজের পরিধিও। তাই চন্দননগরে না এসে, জগদ্ধাত্রীকে না সাজিয়েও তাঁরা থাকতে পারেন না।