নরবলির অপরাধে প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়েছিল মন্দিরের পুরোহিতকে, পূজার সূচনা করেছিলেন দেবী চৌধুরানী
অনেক আগের কথা। স্থানীয় সূত্র জানা যায় সালটা ছিল ১৭৮৫। লোকে বলেন এই মন্দিরে কালী পূজার সূচনা করেছিলেন দেবী চৌধুরানী এবং ভবানী পাঠক।
আজকাল ওয়েবডেস্ক: অনেক আগের কথা। স্থানীয় সূত্র জানা যায় সালটা ছিল ১৭৮৫। লোকে বলেন এই মন্দিরে কালী পূজার সূচনা করেছিলেন দেবী চৌধুরানী এবং ভবানী পাঠক। যখন এই সূচনা হয় তখন মন্দিরটি ছিল ছনের তৈরি একচালার একটি ঘর। পরবর্তী সময়ে বেড়েছে লোকসংখ্যা। পরিবর্তন হয়েছে লোকের চিন্তাধারাও। পরিবর্তন এসেছে মন্দিরের কাঠামোর। কিন্তু বদলায়নি মন্দিরের পূজার ধরনের। এখনও তন্ত্রমতে পূজা করা হয়। ভোগ হিসেবে কালীকে দেওয়া হয় মাছ ও মাংস। লোকের কাছে মন্দিরটির পরিচিতি জলপাইগুড়ি শহরের দেবী চৌধুরানীর শ্মশানকালী মন্দির। মন্দিরটি উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রাচীন মন্দির হিসেবে বিবেচিত। মন্দিরের একটি বিশেষত্ব হল হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে এই মন্দিরে পূজায় যোগ দেন। সেবায়েত হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে এখানে সেবা করে যাচ্ছেন মুসলিম ধর্মাবলম্বী একটি পরিবার।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস অনুযায়ী দেবী চৌধুরানী একদিকে যেমন রুখে দাঁড়িয়েছিলেন ব্রিটিশ অত্যাচারের বিরুদ্ধে তেমনি সমানভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন বাংলার অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে। তাদের থেকে আনা লুন্ঠিত অর্থ বিলিয়ে দিতেন সাধারণ গরীবগুর্বোদের মধ্যে। কথিত আছে, এই মন্দিরের গর্ভগৃহেই রাখা হত সেই লুন্ঠিত ধনসামগ্রী। এখানে একটি বটগাছ আছে। যার বয়স প্রায় ৪০০ বছর। সেই বটগাছের নিচেই তিনি গরীবদের আর্থিক সহায়তা করতেন।
মন্দির কমিটির সম্পাদক দেবাশিস সরকার জানান, দেবী চৌধুরানীর যে গোপন ডেরাগুলি ছিল তার মধ্যে একটি হল এই ডেরা। তিনি জানিয়েছেন, বটগাছের বয়স সম্পর্কে একটি প্রামাণ্য রিপোর্ট তাঁদের কাছে আছে। মন্দিরের প্রথম পূজারি ছিলেন ভবানী পাঠক। তাঁর পর পুরোহিত হিসেবে নাম আছে নয়ন কাপালিক নামে এক ব্যক্তির। নরবলি দেওয়ার অপরাধে যাকে প্রাণদণ্ড দিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার। তবে কালী পূজার রাতে আজও ছাগ বলি হয়ে থাকে মন্দিরে।
মন্দিরের বর্তমান পুরোহিত সুভাষ চৌধুরী বলেন, এই মন্দিরটি শ্মশান কালীর মন্দির। পুজো হয় তন্ত্রমতে। মূল ভোগে খিচুড়ি থাকে না। সেখানে নিবেদন করা হয় সাদা ভাত, শোল মাছ, বোয়াল মাছ, ডাল, নিরামিষ তরকারি, চাটনি, লুচি ও পায়েস। অবশ্যই আছে পূজার রাতে ছাগ বলির প্রথা।