দেবী দুর্গার স্বপ্নাদেশে শুরু হয় পুজো! কোন ইতিহাস লুকিয়ে শিবপুরের রায়চৌধুরী বাড়িতে?

স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুজো শুরু করেছিলেন হাওড়ার শিবপুরের রাজা রামব্রহ্ম রায়চৌধুরী। প্রায় ৩৫০ বছরের এই পুজোয় নিয়ম মেনে আজও দেবী দুর্গার ভাসানের পর তাঁর মুকুট পরানো হয় গৃহদেবতাকে

historical durga puja rituals of shibpur roychowdhury bari
রায়চৌধুরী বাড়ির প্রতিমা

আজকাল ওয়েবডেস্ক: থিম পুজোর ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে পুরনো কলকাতার পুজো। কিন্তু সেই পুরনো স্বাদ আজও বজায় রেখেছে বনেদি বাড়ির পুজোগুলো। তেমনই এক বাড়ি হল শিবপুরের রায়চৌধুরী বাড়ি।

স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুজো শুরু করেছিলেন হাওড়ার শিবপুরের রাজা রামব্রহ্ম রায়চৌধুরী। প্রায় ৩৫০ বছরের এই পুজোয় নিয়ম মেনে আজও দেবী দুর্গার ভাসানের পর তাঁর মুকুট পরানো হয় গৃহদেবতাকে। এই বাড়ির পুজোর নেপথ্যে রয়েছে এক কাহিনী। কথিত আছে, রায়চৌধুরী বাড়ির রাজকন্যা রাজবাড়ির কাছেই বালি পুকুরে রোজ দুপুরে পদ্মাবতী নামে একটি মেয়ের সঙ্গে খেলা করতেন। খেলা শেষে পুকুরে নেমে স্নানও করতেন। একদিন শিবপুরের রাজা রামব্রহ্ম রায়চৌধুরী মেয়ের এই কীর্তিকলাপ জানতে পেরে রেগে যান। কে সেই খেলার সঙ্গিনী? কেন রাজকন্যাকে পুকুরে স্নান করতে বলে? কোথায় থাকে সেই সঙ্গিনী? এসব জানতে রাজকন্যা মারফত তাঁর সঙ্গিনীকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন রাজা। বিষয়টি জেনে রাজকন্যের বান্ধবী সাফ জানান, তিনি রাজার নির্দেশ মানবেন না। তাঁর যদি মনে হয় কারও সঙ্গে দেখা করার প্রয়োজন রয়েছে তবেই তিনি নিজেই পৌঁছে যান। বিষয়টা জেনে তো বেজায় চটেন রাজা। সেদিনই রাজা তাঁর পেয়াদাদের পাঠিয়েছিলেন পুকুর থেকে পদ্মাবতীকে খুঁজে নিয়ে আসতে। কিন্তু পেয়াদারা ওই বালি পুকুরে গিয়ে দেখেন পুকুর ধারে শুধু পায়ের ছাপ। আর সেখানে কেউ নেই।

সেদিন পেয়াদারা ফিরে যান রাজ দরবারে। সেই রাতেই পদ্মাবতী রাজা রামব্রহ্মকে স্বপ্ন দেন। স্বপ্নে তিনি রাজাকে বলেন, তিনি আসলে দেবী দুর্গা। তিনি রাজকন্যার বন্ধু রূপে রোজ দুপুরে বালি পুকুরে তাঁর সঙ্গে খেলা করেন। তাঁর পুজো যেন শিবপুরের রায়চৌধুরী পরিবারে হয়। রামব্রহ্ম এই স্বপ্ন দেখার পর ইংরেজির ১৬৮৫ সাল ও বাংলার ১০৯২ বঙ্গাব্দ থেকে শিবপুরের রায়চৌধুরী পরিবারে আজও দুর্গাপুজো হচ্ছে। আজও রাজার বংশধররা এই পুজো করেন। এই বাড়ির গৃহদেবী মা ব্যাতাইচন্ডী। 

রায়চৌধুরী বাড়ির একটি ঘরে একটি বেলগাছ রয়েছে। সেই বেলঘরেই দেবী দুর্গার ঘট রাখা হয়। দুর্গা দালানে দেবী মূর্তির পাশাপাশি দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে বেলঘরে রাখা ওই ঘটে পুজো করা হয়। দশমীর দিন এই ঘট বিসর্জন করার পাশাপাশি দেবী দুর্গার মূর্তি ভাসান দিয়ে তাঁর মাথার মুকুট গৃহদেবী ব্যাতাইচণ্ডীর মাথায় পরানো হয়।