ইংরেজ অসুরকে বধ করেন উমা! কোন নিয়মে হয় ১৫৫ বছরের ভবানীপুর দে বাড়ির পুজো?
থিমের পুজোর ভিড়ে কি ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজোগুলো? এই পুজোর সঙ্গে কলকাতা শহরের দীর্ঘ ইতিহাস জড়িয়ে।
আজকাল ওয়েবডেস্ক: পুজোর বাকি হাতে গোনা আর কয়েকটা দিন। বাঙালি সারা বছর অপেক্ষায় থাকে পুজোর পাঁচটা দিনের জন্যে। থিমের পুজোর ভিড়ে কি ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজোগুলো? এই পুজোর সঙ্গে কলকাতা শহরের দীর্ঘ ইতিহাস জড়িয়ে। তবুও কি মলিন হয়ে যাচ্ছে সেই ইতিহাস সময়ের সঙ্গে? আজকের প্রজন্মের হাত ধরে কতটা রঙিন বনেদি বাড়ির পুজো?
দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরের দে বাড়ির পুজো আজও রয়েছে একই রকম। এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে স্বদেশি আন্দোলনের চিহ্ন। যা এখনও স্পষ্ট। ভবানীপুরের হরিশ মুখার্জি রোডের দে বাড়ির পুজোতে ব্রিটিশরূপী অসুরকে দমন করেন দুর্গা! পরনে কোট-প্যান্ট। মুখের গড়ন ইংরেজদের মত। অসুরের মাথার চুলও সাহেবদের মতই ধবধবে সাদা।
ভবানীপুরের দে বাড়ির পুজো প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত এই একই নিয়মে হয়ে আসছে। সালটা ১৮৭০। এই পরিবারের পুজোর সূচনা করেছিলেন রামলাল দে। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে, গোবরডাঙ্গায়। পরবর্তীকালে ব্যবসায়িক সূত্রে তিনি দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরে আসেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। পারিবারিক তুলোর ব্যবসার তখন রমরমা অবস্থা। সেই ব্যবসা বংশপরম্পরায় আজও রয়েছে। এই মুহূর্তে পুজোর দায়িত্ব পরিবারের ষষ্ঠ প্রজন্মের কাঁধে।
বাড়ির মেয়ে ময়ুরী দে আজকাল ডট ইন-কে জানান, এই বছর ১৫৫ তম বর্ষে পদার্পণ করল তাঁদের বাড়ির পুজো। বংশপরম্পরায় প্রতিবছর রথযাত্রার দিন কাঠামো পুজোর মাধ্যমে দেবী দুর্গার আরাধনার সূচনা করা হয় এই বাড়িতে। একচালার সাবেকি প্রতিমা পূজিতা হন একই কাঠামোয়। দেবীর বিসর্জনের পর কাঠামো ফিরিয়ে আনা হয়। প্রতিমা তৈরির সব কাজ করা হয় বাড়ির ঠাকুর দালানেই। এই বাড়ির পুজোর আরেকটি বিশেষত্ব হল দেবীর বাহন রূপে থাকা সিংহের গায়ের সাদা রং। দেবী যে ঘরে পূজিতা হন, সেই ঘরে পুরোনো দিনের মাটির মেঝে এখনও অপরিবর্তিত। কুমোরের মূর্তি নির্মাণের পর, পরিবারের সদস্যরা নিজে হাতেই দেবীকে সাজিয়ে তোলেন।
চতুর্থীর দিন পরিবারের মহিলারা দেবীর জন্য নারকেল নাড়ু তৈরি করেন। সিঁদুর দিয়ে রাঙানো অস্ত্র দেবীর হাতে তুলে দেওয়া হয় বোধনের প্রাক্কালে। নিত্যভোগ রূপে ১৩ টি লুচি ও ১৩ রকমের মিষ্টি দেবীকে অর্পণ করা হয়। অষ্টমী তিথিতে কুমারী ও সধবা পুজোর সঙ্গে এই বাড়ির মহিলা সদস্যরা মাথায় ও দুই হাতে সরা নিয়ে ধুনো পোড়ান। অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে ৪৮ মিনিটের সন্ধি পুজোতে ফল ও ২১ কিলো চাল দিয়ে নির্মিত নৈবেদ্য দেবীকে উৎসর্গ করা হয়। তার সঙ্গে দেওয়া হয় ১০৮ প্রদীপ ও ১০৮ পদ্মের মালা। বিজয়া দশমীর দিন জল-আয়নায় দেবীর চরণ দর্শন, দেবীকে বরণ ও সিঁদুর খেলার মাধ্যমে বিদায় জানানো হয়। পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনও প্রতিমা বাঁশে বেঁধে, কাঁধে করেই হেঁটে গঙ্গায় নিরঞ্জন করা হয়। পুজোর পাঁচদিন উমার আরও এক বাপের বাড়ি, ভবানীপুর দে বাড়ি যেন সেজে ওঠে তাদের ঐতিহ্যের রঙে।