প্রতিপদেই সর্বমঙ্গলার পুজো, রাঢ়বঙ্গে শুরু দুর্গোৎসব

শুরু হয়ে গেল বর্ধমানের পুজোর বিধি। বৃহস্পতিবার সকালে ঘটোত্তলনের মধ্য দিয়ে সর্বমঙ্গলা মন্দিরের পুজো শুরু হল। প্রথা মেনে প্রতিপদে সর্বমঙ্গলা মন্দিরে ঘট স্থাপন হতেই পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে গেল বর্ধমানে।

Durga Puja 2024 Bardhaman Durga Puja Begins gnr

আজকাল ওয়েবডেস্ক: শুরু হয়ে গেল বর্ধমানের পুজোর বিধি। বৃহস্পতিবার সকালে ঘটোত্তলনের মধ্য দিয়ে সর্বমঙ্গলা মন্দিরের পুজো শুরু হল। প্রথা মেনে প্রতিপদে সর্বমঙ্গলা মন্দিরে ঘট স্থাপন হতেই পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে গেল বর্ধমানে। বৃস্পতিবার প্রতিপদের দিন বর্ধমানের রাজাদের খনন করা কৃষ্ণসায়র থেকে জল ভরা হল ঘটে। প্রথা অনুযায়ী, সেই ঘট সর্বমঙ্গলা মায়ের মন্দিরে স্থাপন হল। দেবীকে এদিন পরানো হয় রাজবেশ। আর এরই মধ্য দিয়ে বর্ধমান সহ কার্যত গোটা রাঢ়বঙ্গে এদিন থেকেই দুর্গাপুজো শুরু হয়ে গেল।

বর্ধমানের রাজারা জন্মসূত্রে ছিলেন পাঞ্জাবী। পরে বধূ হিসেবে নানা রাজ্যের মেয়েরা এসেছেন পরিবারে। নানা সংস্কৃতি, লোকাচারের মিশেল হয়েছে এখানে। প্রতিবার প্রতিপদে শুরু হয় রাঢ়-জননী সর্বমঙ্গলার পুজো। কৃষ্ণসায়র থেকে আচার মেনে জল ভরা হয়।একটি শোভাযাত্রা হয়। এতে অংশ নেন পুরপ্রধান পরেশ সরকার, বিধায়ক খোকন দাস সহ ভক্তরা। এরপর হয় ঘটস্থাপন। পুজো চলবে নবমী অর্থাৎ নবরাত্রি অবধি।

বহু প্রাচীন সর্বমঙ্গলা মন্দিরে অধিষ্ঠাতা দেবীকে অত্যন্ত জাগ্রত দেবী হিসেবেই মানেন অবিভক্ত গোটা বর্ধমান জেলার বাসিন্দারা। কথিত আছে, রাজা তেজচন্দের আমলে এই মন্দির নির্মাণ হয়েছিল। মন্দির ঘিরে অনেক উপকথা আছে। চুনুরী বাড়ির মেয়েরা নাকি দেবীর পাষাণপ্রতিমায় গুগলি থেতো করতেন। স্বপ্নাদেশ পেয়ে দেবীকে এই প্রাচীন মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়। দেবী দুর্গা এখানে সর্বমঙ্গলা রূপে পুজিতা হন। সারাবছরই তিনি বিরাজ করেন। পুজোর চারদিন ষোড়শোপচারে দেবী আরাধনা হয় সর্বমঙ্গলা মন্দিরে। আগে মহিষ ও পাঁঠা বলি হত। এখন বলিপ্রথা বন্ধ হয়েছে। আগে সন্ধিপুজোর মহালগ্নে কামান দাগা হত। কিন্তু ১৯৯৭-এ বিস্ফোরণের পর থেকে সেই প্রথা বন্ধ হয়ে যায়। নবমীতে কয়েক হাজার মানুষকে ভোগ বিলি করা হয়। পুজোর দিনগুলোতে কয়েক হাজার ভক্তদের সমাগম হয়।

মন্দিরে থাকা সর্বমঙ্গলার মূর্তিটি মন্দিরের থেকেও বেশি প্রাচীন। অনেকের মতে ১০০০ বছর, আবার কারও মতে তা ২০০০ বছরের পুরনো। এই মূর্তিটি হল কষ্টিপাথরের অষ্টাদশভূজা সিংহবাহিনী মহিষামর্দিনী। দৈর্ঘ্যে বারো ইঞ্চি, প্রস্থে আট ইঞ্চি। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হবার পরে, বর্ধমানের তৎকালীন মহারাজা উদয় চাঁদ ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করেন। বোর্ডের হাতেই মন্দিরের পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছে। বর্তমানে এই বোর্ডে প্রশাসনিক আধিকারিকরাও আছেন।