বেঁচে থাকতে যতটা লাগে, ততটাই খাই! পুজোয় রোল-মোঘলাই খাওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই: স্বস্তিকা

Swastika Dutta: কাজ নাকি অবসব যাপন— উৎসবের আমেজে স্বস্তিকার মন জুড়ে কার বাস? খোঁজ নিল আজকাল ডট ইন।

Durga Puja 2025 Swastika dutta speaks about her puja plan

সারা বছর কড়া নিয়মে বাঁধা জীবন। শুটিং সেটের ছোটাছুটি থেকে ঘড়ির কাঁটা ধরে জিমে ঘাম ঝরানো, অভিনয়-চর্চা, দম ফেলার সময় নেই স্বস্তিকা দত্তের। পুজোর চারটে দিন কী ভাবে কাটে টলিউডের তন্বী নায়িকার? কাজ নাকি অবসব যাপন— উৎসবের আমেজে তাঁর মন জুড়ে কার বাস? খোঁজ নিল আজকাল ডট ইন।

নায়িকা হওয়া নয় মুখের কথা। যাবতীয় চাকচিক্য, জাঁকজমকের আড়ালে থাকে ত্যাগ, পরিশ্রমের অজানা আখ্যান। স্বস্তিকার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। পুজোয় অষ্টমী পর্যন্ত কাজ। ব্যস্ত রুটিন থেকে নেই ছুটির অবকাশ। নায়িকার কথায়, “পুজোয় চারদিনের মধ্যে আমি দুটো দিন কাজের জন্য রাখি। আর বাকি দুটো দিন একদম নিয়ম মেনে পরিবারকে দিই। এবার অষ্টমী পর্যন্ত কাজ করব। নবমী-দশমী পুরোটা মা-বাবাকে দেব। এখনও পর্যন্ত তেমনই পরিকল্পনা।”

পুজোর আমেজ, শিউলির সুবাস, কলকাতার অলিগলিতে আড়ম্বড়হীন মণ্ডপে জ্বলতে থাকা টিমটিমে আলো আজও স্বস্তিকাকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় শৈশবে। যে শৈশবে রিল ছিল না, যা ছিল, সবই ‘রিয়েল’। শটের ফাঁকেই সেটে বসে স্মৃতির পাতা ওল্টাতে থাকেন স্বস্তিকা। বলেন, “আমার কাছে পুজো মানেই ছোটবেলার স্মৃতি। বেল্ট দেওয়া জুতো পরে ঠাকুর দেখতে বেরতাম। পায়ে ফোস্কা পড়া পর্যন্ত ঘুরতাম। তারপর বাবা আমায় কোলে তুলে নিতেন। আশপাশের কোনও দোকান থেকে ব্যান্ড এইড কিনে পরম স্নেহে পায়ে লাগিয়ে দিতেন।”

স্বস্তিকার জনপ্রিয়তা এখন দেখার মতো। নেটমাধ্যমে নায়িকার অনুগামীর সংখ্যাই তার অন্যতম খতিয়ান। সেই জনপ্রিয়তাকে যেমন সাফল্যের মাপকাঠি বলে ধরে নেওয়া যায়, আবার তেমনই এর সুবাদেই দক্ষিণ কলকাতার কন্যের মণ্ডপে-মণ্ডপে বেপরোয়া টহলদারি প্রায় পুরোপুরি বন্ধ। তবে শৈশবটা এমন নিয়মের বেড়াজালে বাঁধা ছিল না এমন নিয়মের বেড়াজালে। নস্টালজিয়া ছুঁয়ে তিনি বলেন, “তখন আমাদের বাড়িতে একটা সাদা অ্যাম্বাসাডর ছিল। সপ্তমী-অষ্টমী দক্ষিণে আর নবমী-দশমী কলকাতায় ঠাকুর দেখতাম। সে যে কী মজা হত!”

তখন ছিল না নামীদামি রেস্তরাঁর বাহার। পাড়ায়-পাড়ায় গজিয়ে ওঠেনি ‘ইনস্টা ওর্দি’ ক্যাফে। মাচা-স্টেক-সুশিরা তখন কোথায়! ঠাকুর দেখার ফাঁকে ফাঁকে রাস্তার ধারে বাঁশের কাঠামোয় ত্রিপলে মোড়া স্টল থেকে তেল জবজবে রোল-চাউমিন-মোঘলাই দিয়েই চলত পেটপুজো। তবে এখন সময় বদলেছে। নায়িকাদের মেদহীন-ঝরঝরে ধরে রাখতে গোটা বছরই চলে ডায়েট। প্রিয় খাবারের মায়া ত্যাগ করে পাতে তুলে নিতে হয় স্বাস্থ্যকর বিকল্প। তবে স্বস্তিকা ‘ফুডি’ থুড়ি খাদ্যরসিক নন। তাঁর কথায়, “বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু খেতে হয়, আমার ততটুকু হলেই চলে। এছাড়া জাঙ্ক ফুডও আমার বিশেষ প্রিয় নয়। আমার মা পাঞ্জাবি, বাবা বাঙালি। দু’রকমে জিনই আমার মধ্যে রয়েছে। কিন্তু দুর্গাপুজোয় যে আমায় মোঘলাই, বা কুমড়ো দিয়ে বানানো সস দেওয়া কোনও ভাজাভুজি খেতেই হবে, এমনটা নয়। দুর্গাপুজো এমন একটা উৎসব, যখন মানুষ আনন্দে মেতে ওঠে। ওটাই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”

তবে ইচ্ছা হলেই ঢাকের বাজনা শুনতে শুনতে পাতে নির্দ্বিধায় বিরিয়ানি তুলে নেন স্বস্তিকা। উৎসবের কয়েকটা দিন নায়িকার মায়েরও হেঁশেলে প্রবেশ পুরোপুরি নিষেধ। বাইরে থেকে ভালমন্দ আনিয়ে হয় রসনাতৃপ্তি। আর কেনাকাটা? নায়িকা বলেন, “পুজোর জন্য কেনাকাটা করা অনেক আগেই বন্ধ করে দিয়েছি। তবে মা-বাবা এখনও ঘনঘটা করে জামা কিনে দেন। ওদেরও আমি নিয়ে যাই কেনকাটা করাতে। বলি, ‘তোমাদের যেটা ভাল লাগে নাও, বাকি দায়িত্ব আমার’। আর পুজোতে বাড়ির ঠাকুরের জন্য নতুন জামা কেনা হয়। এটা আমাদের পরিবারের বাঁধাধরা নিয়ম।”

সারা বছর কাজ বা ভ্রমণে হিল্লি-দিল্লি করলেও পুজোর চারটে দিন কলকাতাই স্বস্তিকার প্রাণের শহর। নায়িকার যুক্তি, “পুজোর সময় কোটি টাকার কাজের প্রস্তাব এলেও কলকাতা ছেড়ে যাওয়ার কথা একটু ভেবে দেখতে হবে। আসলে কিছু জিনিস তো বছরে একবারই আসে।”