উচ্চশিক্ষিত হয়েও জোটেনি চাকরি, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আজ তিনি পরিচিত 'বি এড ফুচকা দিদি'
শিক্ষিত হওয়ার পরও চাকরি না পাওয়ার থাকার কষ্টকে শক্তিতে পরিণত করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন এই তরুণী।

আজকাল ওয়েবডেস্ক: বি এড পাশ করা সত্ত্বেও সরকারি চাকরির সুযোগ পাননি রানাঘাটের প্রিয়সী ঘোষ। তবে হাল ছেড়ে না দিয়ে, নিজের মতো করেই নিজের লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। নিজের তৈরি ফুচকা এবং গাড়িতে সেই ফুচকা চাপিয়ে বিক্রি করে আজ তিনি পরিচিত ‘বি এড ফুচকা দিদি’ নামে। শিক্ষিত হওয়ার পরও চাকরি না পাওয়ার থাকার কষ্টকে শক্তিতে পরিণত করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন এই তরুণী।
রানাঘাট শহরের চাবিগেট এলাকার ছোট্ট এক ঘরে মা মিনাদেবীকে নিয়ে প্রিয়সীর বসবাস। মাত্র আড়াই বছর বয়সে বাবার অনুপস্থিতি তাঁর জীবনে নিয়ে আসে এক কঠিন বাস্তবতা। মা লোকের বাড়িতে কাজ করে কোনওরকমে সংসার চালাতেন। প্রিয়সীর ছোটবেলা কেটেছে মামার কাছে। মামা ছিলেন নৃত্যশিল্পী। তাঁর কাছেই নাচ শেখেন প্রিয়সী। পরে সেই শিক্ষা দিয়েই শুরু হয় তাঁর বেঁচে থাকার রোজগার। পাশাপাশি, মুক্তমঞ্চে গান গেয়েও চলত পড়াশোনার খরচ চালানোর লড়াই। জীবনের ডায়েরিতে সব পাতাতেই একটা শব্দ লিখতে লিখতে তিনি এগিয়ে গিয়েছেন, 'লড়াই'। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মামার সাহায্যে পড়াশোনা চালালেও পরে পড়াশোনার খরচ নিজের কাঁধেই তুলে নেন প্রিয়সী। সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও শেষে বি এড পাশ করেন তিনি। স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হবেন। কিন্তু চাকরি মেলেনি। হতাশ না হয়ে জীবনের নতুন পথ খুঁজে নেন। নিজে ফুচকা বানানো শিখে শুরু করেন ফুচকার ব্যবসা। আর দোকানের নাম রাখেন 'বি এড ফুচকা দিদি'— যেখানে লুকিয়ে আছে এক ব্যর্থতার মধ্যেও আত্মমর্যাদাকে ধরে রাখার জ্বলজ্বলে দৃষ্টান্ত।
প্রিয়সী প্রতিদিন ফুচকার গাড়ি সাজিয়ে পৌঁছে যান রানাঘাট শহরের স্বামী বিবেকানন্দ রোডে। গাড়ি থেকে বিক্রি করেন বিভিন্ন স্বাদের ফুচকা। দোকানে খুদে থেকে বড়, সবার ভিড় লেগেই থাকে। ফল মিলছে এই পরিশ্রমের। তাঁর মা এখন আর বাড়ির বাইরে কাজ করেন না। মেয়ের উপার্জনেই চলে সংসার।প্রিয়সী বলেন, 'চাকরি না পেলেও আমি হেরে যাইনি। ব্যবসা করছি। সঙ্গে স্বপ্ন দেখি সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর। একটু একটু করে সঞ্চয় করছি, ভবিষ্যতে বড় কিছু করার ইচ্ছা আছে।'
স্থানীয় মানুষজনও প্রিয়সীর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। অনেকেই বলেন, 'ওঁকে দেখে অনেক মেয়ে সাহস পাবেন। এগিয়ে আসবেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে। সৎভাবে উপার্জন করলে কোনো কাজই ছোট নয়।' প্রিয়সীর গল্প আজ শুধু এক তরুণীর আত্মনির্ভরতার উদাহরণ নয়। বরং সমাজে ছড়িয়ে দিচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা— মেয়েরা চাইলে নিজের শক্তিতে স্বপ্ন গড়তে জানেন। চাকরি না পেলেও জীবন থেমে যায় না, পথ খুঁজে নিতে হয়।
এই ‘বি এড ফুচকা দিদি’ যেন হাজার 'প্রিয়সী'র মুখপাত্র। যাঁরা লড়াই করেন নীরবে, মাথা উঁচু রেখে। আর তাঁদের দেখে শক্তি পান বাকিরা। মনে মনে সঙ্কল্প নেন, পথ বন্ধুর হতে পারে, কিন্তু তাতেও পাড়ি দেওয়া সম্ভব। দরকার শুধু একটু সদিচ্ছার।