উৎসবের আলোয় একাকিত্বের আঁধার! পুজোর ভিড়েও গ্রাস করছে নিঃসঙ্গতা? কোন পথে সমাধান?
Durga Puja 2025: যে সময়টা সকলের সঙ্গে আনন্দে কাটানোর, সেই সময়েই একাকিত্বের যন্ত্রণা তীব্র হয়ে ওঠে অনেকের জীবনে।

আজকাল ওয়েবডেস্ক: আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ, বাতাসে শিউলি ফুলের গন্ধ আর পাড়ায় পাড়ায় প্যান্ডেলের ব্যস্ততা, দুর্গাপুজো মানেই বাঙালির কাছে এক মিলনোৎসব। নতুন পোশাকের গন্ধ, ঢাকের আওয়াজ আর বন্ধুদের সঙ্গে রাতভর ঠাকুর দেখার এই আনন্দযজ্ঞে সামিল হয় আপামর বাঙালি। কিন্তু এই উৎসবের আলোর রোশনাই কি সকলের মনকে একইভাবে আলোকিত করতে পারে? মনোবিদরা জানাচ্ছেন, উৎসবের এই আবহই অনেক সময়ে একা থাকা মানুষদের জন্য হয়ে ওঠে আরও বেশি নিঃসঙ্গতার কারণ। যে সময়টা সকলের সঙ্গে আনন্দে কাটানোর, সেই সময়েই একাকিত্বের যন্ত্রণা তীব্র হয়ে ওঠে অনেকের জীবনে।
কেন পুজোর সময় একাকিত্ব বাড়ে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পিছনে একাধিক সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক কারণ রয়েছে।
১। সামাজিক চাপ: দুর্গাপুজো মানেই পরিবার, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে হইচই করে কাটানো। এই ধারণাটি আমাদের মনে এতটাই গেঁথে গিয়েছে যে, যাঁরা একা থাকেন বা যাঁদের বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যা কম, তাঁরা এক ধরনের সামাজিক চাপের শিকার হন। সোশ্যাল মিডিয়ায় সকলের ঘোরার ছবি দেখে তাঁদের মধ্যে ‘ফিয়ার অফ মিসিং আউট’ (ফোমো) বা পিছিয়ে পড়ার ভয় কাজ করে, যা একাকিত্বকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
২। স্মৃতিকাতরতা: পুজো ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে ছোটবেলার স্মৃতি, পরিবার এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তের সঙ্গে। যাঁরা কর্মসূত্রে বা অন্য কোনও কারণে পরিবার থেকে দূরে থাকেন, অথবা সম্প্রতি কোনও প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাঁদের কাছে এই উৎসব আনন্দের বদলে বিষাদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পুরনো দিনের কথা মনে পড়ায় তাঁদের একাকিত্ব আরও গভীর হয়।
৩। পরিবর্তিত জীবনযাত্রা: আধুনিক শহুরে জীবনে অনেকেই কর্মসূত্রে একা থাকেন। পুজোর লম্বা ছুটিতে যখন সহকর্মীরা বা প্রতিবেশীরা নিজেদের পরিবারের কাছে ফিরে যান, তখন ফাঁকা শহরে একা থাকাটা আরও বেশি কঠিন হয়ে পড়ে।
একাকিত্ব থেকে মুক্তির উপায় কী?
মনোবিদরা জানাচ্ছেন, পুজোর সময়ে একা লাগাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এই অনুভূতিকে অস্বীকার না করে, বরং কিছু সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।
নিজের জন্য উৎসব পালন করুন: কে বলল উৎসব পালন করতে বাইরে যেতেই হবে? নিজের জন্য একটা দিন উৎসর্গ করুন। পছন্দের খাবার রান্না করুন বা অর্ডার দিন, বাড়িতেই পছন্দের সিনেমা দেখুন, অথবা এমন কোনও কাজ করুন যা আপনাকে আনন্দ দেয়। নিজের মতো করে উৎসবকে উপভোগ করার মধ্যে এক অন্যরকম তৃপ্তি রয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে যোগ দিন: পুজোর সময়ে বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দুঃস্থদের জন্য কাজ করে। কোনও একটি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান। দুঃস্থ শিশুদের নতুন জামা দেওয়া বা বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের সঙ্গে সময় কাটানোর মাধ্যমে যে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়, তা একাকিত্বকে নিমেষে দূর করে দেয়।
নতুন বন্ধুত্ব পাতান: এখন বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপে বা অ্যাপে নতুন বন্ধুত্বের সুযোগ রয়েছে। চাইলে কোনও ভ্রমণ গোষ্ঠীর সঙ্গে কাছাকাছি কোথাও ঘুরে আসতে পারেন। সমমনস্ক মানুষের সঙ্গে আলাপ হলে একাকিত্ব অনেকটাই কেটে যায়।
পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন: কর্মব্যস্ত জীবনে হয়তো অনেক পুরনো বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। পুজোর এই অবসরে তাঁদের ফোন করুন। হয়তো জানতে পারবেন, তাঁদের মধ্যেও কেউ আপনার মতোই একা বোধ করছেন।
মনোবিদের সাহায্য নিন: যদি একাকিত্ব এবং বিষণ্ণতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে মনোবিদ বা কাউন্সিলরের সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না। মনে রাখবেন, মানসিক স্বাস্থ্যও শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই গুরুত্বপূর্ণ।
আসলে, দুর্গাপুজো শুধু বাহ্যিক আড়ম্বরের উৎসব নয়, এটি ভেতরের অন্ধকারকে পরাজিত করারও উৎসব। নিঃসঙ্গতা যদি সেই কষ্টের কারণ হয়, তবে তাকে পরাজিত করার দায়িত্বও আমাদেরই। নিজের মতো করে পথ খুঁজে নিলে উৎসবের আলো মনের অন্ধকার দূর করতে পারবে।