বনেদিয়ানার সঙ্গে আধুনিকতার মিশেল, উতলিকার পুজো বয়ে নিয়ে চলেছে বাঙালির ঐতিহ্য
সেকালের দুর্গাপুজো কেমন হত, বই ঘাঁটলে সে সবের সন্ধান পাওয়া যাবে। চক মেলানো মেঝে, ঠাকুর দালান, সঙ্গে একান্নবর্তী পরিবারের নানা রীতি রেওয়াজ। দীর্ঘদিন পর পরিবারের সবাই এক জায়গায় হয়ে আনন্দে মেতে ওঠা। যৌথ পরিবার ভেঙে গিয়েছে অনেকদিন। এসেছে ফ্ল্যাট। ছোট-ছোট পরিবার মিলে বড়-বড় আবাসন।
আজকাল ওয়েবডেস্ক: সেকালের দুর্গাপুজো কেমন হত, বই ঘাঁটলে সে সবের সন্ধান পাওয়া যাবে। চক মেলানো মেঝে, ঠাকুর দালান, সঙ্গে একান্নবর্তী পরিবারের নানা রীতি রেওয়াজ। দীর্ঘদিন পর পরিবারের সবাই এক জায়গায় হয়ে আনন্দে মেতে ওঠা। যৌথ পরিবার ভেঙে গিয়েছে অনেকদিন। এসেছে ফ্ল্যাট। ছোট-ছোট পরিবার মিলে বড়-বড় আবাসন। সেই থেকে শুরু হয়েছে আবাসনের পুজো। কিন্তু সেই পুজোতে যদি মিশে থাকে আদি-অকৃত্রিম বনেদিয়ানার গন্ধ, তা হলে কেমন হয়? মুকুন্দপুর উতলিকা লাক্সারি আবাসনের পুজোয় মিশে আছে সেই শোভাবাজার কিম্বা দাঁ-বাড়ির ঐতিহ্যের রঙ। সেখানে পুজো হচ্ছে বনেদি ঠাকুর দালানে। চক-মেলানো মেঝের ঠাকুর দালানে মা এসেছেন সাবেকি হয়ে।
উত্তর কলকাতার বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোর কথা উঠলেই, সবার প্রথমে উঠে আসে যে নামটি, তা হল শোভাবাজার রাজবাড়ি ৷ এই বাড়ির পুজো নিয়ে কতই না গল্প ৷ এই রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা রাজা নবকৃষ্ণ দেব ৷ শোনা যায় তিনি ওয়ারেন হেস্টিংসের গৃহশিক্ষক ছিলেন ৷ ব্রিটিশ আমলে প্রথম দেশীয় বিচারকও ছিলেন তিনি ৷ ১৭৫৭ সালে রাজা নবকৃষ্ণ দেব শোভাবাজার রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোর শুরু হয় ৷ উপলক্ষ্য- পলাশীর যুদ্ধে বিজয়ী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন। যদিও দেব পরিবার এই তত্ত্বের সঙ্গে সর্বাংশে সহমত নন। জানা যায়, লর্ড ক্লাইভ, লর্ড হেস্টিংসের মতো ব্রিটিশ শাসক থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, গান্ধীজির মতো মনীষীদের পদধূলি পড়েছে এই রাজবাড়ির পুজোতে ৷ শোনা যায় শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব এই বাড়িতে ৯০ দিন পুরোহিত হিসেবে কাজ করেছিলেন ৷
একবার পুজোর সময় তিনি ছড়রাগাড়িতে চেপে শোভাবাজার রাজবাড়িতে হাজির হয়েছিলেন ৷ আর এসেই তিনি মায়ের সামনে ষাষ্ঠাঙ্গে প্রণাম করেছিলেন ৷ আর বাড়িতে রামকৃষ্ণদেব এসেছেন, এ কথা চাউড় হতেই, লোকে লোকারণ্য হয়েছিল গিয়েছিল শোভাবাজার রাজবাড়ি ৷ রাজা নবকৃষ্ণ দেব তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র গোপীমোহন দেবকে পুত্র হিসেবে দত্তক নেন ৷ এমনই নানা ইতিহাস যে দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে জড়িয়ে আছে, সেই পুজোয় সাবেকিয়ানা কম পড়লে চলে?
এই আবাসনের পুজোর ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর বৈশাখী ঘোষ জানিয়েছেন, 'বাঙালিয়ানাকে ফিরে পাওয়ার একটা ভাবনা মনে মধ্যে ছিল। আমি পেশাগত দিক থেকে স্পেস ডিজাইনার। সেই কারণে অতীতের কথা মাথায় রেখেই এই নাটমন্দির তৈরির কথা ভাবা। নাটমন্দিরের ছাদের দিকে তাকালে, মেঝের দিকে তাকালে সেই অতীতের কথা ধরা পড়বে। আমাদের ভাবনাই ছিল, যাতে এমন একটা স্থান আমরা পাই, যেখানে আমরা চারদিন ধরে আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠব।'
এই পুজোর উদ্বোধনে রামকৃষ্ণ ইনস্টিটিউট অফ কালচার, গোলপার্কের সম্পাদক স্বামী সুপর্ণানন্দ মহারাজ উপস্থিত ছিলেন। এ বারের পুজোয় রয়েছে নানারকম আয়োজন। অষ্টমীর সন্ধ্যায় উপস্থিত থাকবেন শিল্পী সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় এবং নীপবিথী ঘোষ। থাকবে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, শাস্ত্রীয় নৃত্যের আয়োজন। থাকবে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠার সুযোগ থাকবে ষোল আনা। সব মিলিয়ে পুজোর সমস্ত রূপ-রস-গন্ধ থাকবে এই নাটমন্দিরের ইটে-কাঠের পাঁজরে।