বিরাম নেই, ক্রমশই দীর্ঘ হচ্ছে বর্ষা, পুজোর আগে ক্ষতির মুখে মৃৎশিল্প, আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন শিল্পীরা

গরম থেকে রক্ষা পেলেও একটানা দীর্ঘ বর্ষায় ক্ষতির মুখে পড়েছে জেলার মৃৎশিল্প। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে সময়ের মধ্যে প্রতিমা সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি।

Durga Puja 2025: artists are facing difficulties to make durga idol due extended monsoon
মেঘলা স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় মৃৎশিল্পীদের নাজেহাল অবস্থা। ছবি: পার্থ রাহা।

মিল্টন সেন, হুগলি: কখনও ভারী, কখনও একটানা বা বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি। নিম্নচাপের জেরে রাজ্যজুড়ে টানা বৃষ্টি হয়েই চলেছে। গরম থেকে রক্ষা পেলেও একটানা দীর্ঘ বর্ষায় ক্ষতির মুখে পড়েছে জেলার মৃৎশিল্প। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে সময়ের মধ্যে প্রতিমা সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি। যে কারণে মাথায় হাত পড়েছে মৃৎশিল্পীদের। টানা দু’মাসের বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। বৃষ্টির কোনও বিরাম নেই। কখনও নিম্নচাপের প্রভাবে ভারী বৃষ্টি তো আবার কখনও হালকা বা মাঝারি বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জনজীবন। বাস্তবে একটানা মেঘলা স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ার ফলেই মৃৎশিল্পীদের নাজেহাল অবস্থা। আবহাওয়ার কারণে মূলত মাটির তৈরী প্রতিমা শুকোনোর ক্ষেত্রে ব্যাপক সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে গ্যাস গান ব্যবহার করে প্রতিমার মাটি শুকনো করার কাজ চলছে। অনেক জায়গায় আবার কাঠ-কয়লা পুড়িয়ে মাটি শুকোনোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু, কড়া রোদ ছাড়া এভাবে একাধিক প্রতিমা তৈরি কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ছে।

কৃষ্ণনগর থেকে চুঁচুড়ার ধরমপুরে এসে প্রতিমা গড়েন শিল্পী বীরেন পাল। তাঁর ঠাকুর গোলায় সব শিল্পীরাই আসে কৃষ্ণনগর থেকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিল্পীদের মজুরি বেড়েছে। পাশাপাশি মাটি, খড়, দড়ি, পেরেক সহ প্রতিমা তৈরির সব জিনিসেরই দাম বেড়েছে। তারপর বর্ষায় প্লাস্টিক ঢেকে আগুন দিয়ে মাটি শুকোতে সেই খরচ আরও বাড়ছে। মাটি না শুকোলে রঙ করা যাবে না। এদিকে হাতে আর বেশি সময় নেই। আবার সূর্যের আলোর উপরও ভরসা করা যাচ্ছে না। এই প্রসঙ্গে মৃৎ শিল্পী বীরেন পাল জানিয়েছেন, টানা পাঁচ মাস ধরে তিনি দুর্গা প্রতিমা তৈরীর কাজ করে থাকেন। তাঁর মধ্যে প্রায় আড়াই মাস চলে গেছে, কিন্তু বৃষ্টি কমছে না। একটানা বৃষ্টি আর খারাপ আবহাওয়া প্রতিমা তৈরীর ক্ষেত্রে বাধ সাধছে। ওদিকে প্রতিমা তৈরীর খরচ ক্রমশ বাড়ছে।

আরও পড়ুন: এক হাতেই গড়েন দশ হাতের নিখুঁত দুর্গাপ্রতিমা, সংগ্রামের অপর নাম ধনঞ্জয়

সময় চলে গেলেও কাজ সেই তুলনায় এগোচ্ছে না। এমন আবহাওয়া থাকলে আদৌ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকে যাবে। ফলে সময়ের মধ্যে প্রতিমা সরবরাহ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা। সাম্প্রতিক সময়ে ভয়ের বাতাবরণ কমার বদলে যেন বাড়ছে আরও। শ্রাবণ পেরিয়ে গিয়েছে, ক্যালেন্ডারের হিসেবে বর্ষাও। আর সেই পরিস্থিতি এবার প্রতিমুহূর্তে প্রতি ক্ষণে রাজ্যের আবহাওয়া দপ্তর বার্তা দিয়ে চলেছে আরো ভারী থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা। শুকোচ্ছে না জল, শুকাচ্ছে না মাটি, টানা স্যাঁতসেঁতে পরিস্থিতি। ফলে মাতৃপ্রতিমা গড়ার কারিগররা প্রতিমা নির্মাণে প্রতিমুহূর্তেই শঙ্কায় ভুগছেন। একদিকে ভাবনা, সময়ের মধ্যে কীভাবে প্রতিমা সাজিয়ে পাঠাবেন, অন্যদিকে ভাবনা, এই পরিস্থিতিতে কাজ সম্পন্ন না হলে, রোজগার হবে কীভাবে? 

প্রতিমা শিল্পীদের বক্তব্য, মাতৃ প্রতিমার বায়না আছে যথেষ্ট পরিমাণে, বায়না আসছে দূর দূরান্ত থেকে। কিন্তু তা পূর্ণ করা সম্ভব কতটা হবে সেটাই তো চিন্তার। কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ এতটাই ভয়াবহতা রূপ নিয়েছে যেন প্রতিমুহূর্তে লাল চোখ দেখাচ্ছে বজ্রবিদ্যুৎকে সঙ্গে নিয়ে, তার কারণে পরিস্থিতি যথেষ্ট পরিমাণে প্রতিকূল হয়ে উঠেছে এই পরিস্থিতির মধ্যে। এই পরিস্থিতিতে আতঙ্কে দিনযাপনের কথা জানিয়েছেন মেদিনীপুর এগরার এক মৃৎশিল্পী। আবহাওয়া বিশারদদের মতে, এ বছরের বর্ষার ঘনঘটা ও ক্রমাগত নিম্নচাপের কারণে বৃষ্টি বিগত এক দশকেও দেখা যায়নি। আর এই বছর বৃষ্টির প্রকোপ এতটাই বেশি যেন মাটির জল শুকোতেই চাইছে না। যার ফলে মৃৎশিল্পীদের চোখের জলে নাকের জলে এক হতে হচ্ছে। শহর কলকাতার কুমারটুলিতে মৃৎশিল্পীদের প্রতিমা গড়ার অত্যাধুনিক বেশ কিছু ব্যবহার রয়েছে এবং প্রতিমা শুকানোরও আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন তাঁরা। এরপরেও শহর কলকাতার কুমারটুলির শিল্পীরা তাদের চিন্তার কারণ কোন অংশে কম নয়। এই ভয়াবহ বৃষ্টির কারণে আধুনিক পদ্ধতি থাকার পরেও আতঙ্কে ও ভয়ে দিনযাপন করছেন তাঁরা। কীভাবে দূর দূরান্ত থেকে আসা প্রতিমার বায়না সম্পূর্ণ করবেন সে নিয়ে যথেষ্ট পরিমাণে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন কুমোরটুলির কারিগররাও।