পুজোর সূচনা ১৮৯৬-এ, দায়িত্ব সামলেছিলেন বাল্য-বিধবা বিন্দুবাসিনী, একই রীতিতে এখনও চলছে এই পুজো

Durga Puja: ১২৯ বছরে বহরমপুরের খাগড়া এলাকায় নতুন বাজারের সেন বাড়ির দুর্গা পুজো । আনুমানিক ১৮৯৬ সালে সেন বাড়িতে দুর্গাপুজোর সূচনা করেন অবিভক্ত বাংলার সাব-জজ রাধাকৃষ্ণ সেন।

Baharampur sen family durga puja

আজকাল ওয়েবডেস্ক: ১২৯ বছরে বহরমপুরের খাগড়া এলাকায় নতুন বাজারের সেন বাড়ির দুর্গা পুজো । আনুমানিক ১৮৯৬ সালে সেন বাড়িতে দুর্গাপুজোর সূচনা করেন অবিভক্ত বাংলার সাব-জজ রাধাকৃষ্ণ সেন। যদিও সেক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা নেন তাঁরই বাল্য বিধবা কন্যা বিন্দুবাসিনী দেবী। তখন থেকে আজ পর্যন্ত একই রীতিনীতি অনুসরণ করে সেনবাড়ি দুর্গাপুজো করে আসছেন রাধাকৃষ্ণ সেনের পরবর্তী প্রজন্ম। 


সেন বাড়ির ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা দেখা যায়, বর্গী আক্রমণে জর্জরিত হয়ে সেন বংশের কোনও এক বংশধর তাঁদের আদি নিবাস 'চক ইসলামপুর' ছেড়ে বহরমপুরের চলে আসেন। পরবর্তীকালে অধুনা বহরমপুর পুরসভার অন্তর্গত গিরিজা শঙ্কর চক্রবর্তী লেনে প্রতিষ্ঠা হয় 'সেন বাড়ি'। তাই এই বাড়ির দুর্গাপুজোয় রয়েছে ইতিহাস, ঐতিহ্য, পরম্পরা ও সাবেকিআনার এক বিশেষ মেলবন্ধন।


প্রাচীন রীতি মেনেই রথের দিন কাঠামো পুজোর মধ্যে দিয়ে সেন বাড়ির দুর্গাপুজোর সূচনা হয় বলে জানান বাড়ির সদস্য সুবীর সেন। তিনি বলেন, ‘সোজা রথে কাঠামো পুজোর পর থেকেই আমাদের বাড়িতে প্রতিমা তৈরীর কাজ শুরু হয়ে যায়। তবে ভাদ্র মাসে পুজোর কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। তারপর কার্তিক মাস থেকে আবার চলে প্রতিমা তৈরীর কাজ। এরপর মহালয়ার দিন পিতৃপক্ষের অবসানে মাতৃ পক্ষের সূচনায় মহামায়ার চক্ষুদান অনুষ্ঠিত হয়। ষষ্ঠীতে ষষ্ঠাধিকর্মের মাধ্যমে দুর্গাপুজো আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়ে যায়।‘
সুবীর আরও জানান, ‘১৮৯৬ সালে যে শাল কাঠের কাঠামোতে প্রতিমা তৈরি করা হয়েছিল সেই কাঠামো এখনও অক্ষত। হয়তো কালের প্রভাবে মাঝে মধ্যে কিছুটা সংস্কার করতে হয়েছে। কিন্তু মূল কাঠামোতে এখনও আমাদের প্রতিমা তৈরি করা হয়।‘


'সেন বাড়ি'র পুত্রবধূ সুলেখা সেন জানান তাঁদের দুর্গাপুজোর বিভিন্ন রীতিনীতির কথা। তাঁর  কথায়, ’দুর্গাপুজোর  প্রাচীন রীতিনীতি মেনে এখনও আমরা এই পুজো করে যাচ্ছি। একটি শুভ দিন দেখে কলা বউয়ের 'কোরা কাপড়' হলুদে ডুবিয়ে সেটি পরার উপযুক্ত করে তোলা হয়। এছাড়া আমাদের বাড়ির পুজোর বিশেষত্ব হল, এখানে পুজোয় মায়ের নৈবেদ্যতে  অন্যান্য মিষ্টির বদলে থাকে নারকেল নাড়ু। আর সেই নাড়ু আমরা বাড়িতেই তৈরি করি। এমনকি দশমীর দিন মাকে বরণ করার সময় সেই নাড়ু দিয়েই মিষ্টিমুখ করানো হয়। আমাদের বাড়ির পুজোতে দেবীকে অন্নভোগ দেওয়া হয় না। তার পরিবর্তে দেওয়া হয় ঘিয়ের তৈরি লুচি। আর নবমীর দিন ভোগের মধ্যে থাকে টকশাক, কলার বড়া ইত্যাদি।‘ সুলেখা আরও জানান, ‘দশমী পুজো শেষে দেবীকে দোলায় করে গঙ্গা ঘাটে নিরঞ্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।‘