কলেজ শেষ করেই শুরু প্রতিমা তৈরির কাজ, ৩৫ বছর ধরে বাবা-ঠাকুরদার পরম্পরা বয়ে নিয়ে চলেছেন মিন্টু পাল

Durga Puja:এবছর বিদেশে গিয়েছে তাঁর তৈরি করা ২০টি প্রতিমা। বিদেশে যেসব প্রতিমা যায়, সাধারণত সেগুলির কাজ শেষ হয় আগে, মাটিতে হাত দেওয়ার আগে, ফাইবারের মূর্তি তৈরি করে, তাকে নিখুঁত সাজিয়ে, জাহাজে তুলে দেন শিল্পী।

This Puja know about Artist Mintu Pal

রিয়ট। ক্যালেন্ডারে যখন গ্রীষ্মকাল, তখন থেকেই দম ফেলার সময় থাকে না এই ঠিকানার কর্তার। তুলুম ব্যস্ততা-মনে মনে হিসেব করেতে থাকেন, এবছর প্রতিমা কটা, কটা ঠাকুর যাবে বিদেশে, কোন পাড়া কেমন ঠাকুর চাইছে এখন। মাঝে মাঝে জিরিয়ে নেন কিছুটা। কাঁচা মাটি আর কাঠামো পেরিয়ে সেই ছোট ঘরখানা ভর্তি শিল্পীর এত বছরে বানানো নানা প্রতিমার ছবিতে।

কথা হচ্ছে মিন্টু পালকে নিয়ে। বড় হয়েছেন কাদা-মাটির গন্ধ, মাটির তালকে মাতৃমূর্তিতে পরিণত হতে দেখে দেখেই। ছোট বেলায় দাঁড়িয়ে থেকেছেন, দেখেছেন ঠাকুর তৈরি হতে। একটু বড় হয়ে, বাবার সঙ্গে ঠাকুর তৈরিতে হাত দিয়েছেন। কলেজ শেষ করেই নিজেও পাকাপাকি ভাবে এসেছেন এই কাজে। বাবা-ঠাকুরদার পরম্পরাকে বজায় রেখে, ৩৫ ধরে মিন্টু তৈরি করছেন প্রতিমা।

এবছর বিদেশে গিয়েছে তাঁর তৈরি করা ২০টি প্রতিমা। বিদেশে যেসব প্রতিমা যায়, সাধারণত সেগুলির কাজ শেষ হয় আগে, মাটিতে হাত দেওয়ার আগে, ফাইবারের মূর্তি তৈরি করে, তাকে নিখুঁত সাজিয়ে, জাহাজে তুলে দেন শিল্পী। তারপর হাত পড়ে মাটির তালে। কলকাতা এবং শহরতলির ৪০টি প্রতিমা তৈরি করছেন তিনি। 

দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় ধরে ঠাকুর তৈরি করে শিল্পী কী বদল দেখলেন মানুষের চাহিদার? মিন্টু পাল বলছেন, ‘সাবেকি মূর্তির চাহিদাই আগে ছিল বেশি। প্রায় সকলেই এক ধরনের মূর্তি তৈরি করতে দিতেন। তবে সময় বদলেছে। বদলাচ্ছে মানুষের চাহিদা। অনেকেই এখন প্রতি বছর নতুন ভাবনা, নতুন ধরনের মুর্তি চান। তাই সাবেকি মূর্তির পাশাপাশি অন্য ধরনের মূর্তিও বানাই। তাছাড়া চাহিদা বাড়ছে আর্ট-ওয়ার্কের। আর্ট-কলেজের পড়ুয়া, শিল্পীদের থেকে অনেকেই মূর্তি তৈরি করাচ্ছেন নতুন ধারার।‘ তাতে কি চাহিদা কমছে গতানুগতিক মূর্তি-নকশার, সমস্যায় কি পড়ছেন কুমোরটুলির শিল্পীরা। যদিও মিন্টু পাল বলছেন, ‘না না। সাবেকি মূর্তির চল চিরন্তন। এটা থেকে যাবেই।‘  

২২ জন এবার কাজ করেছে তাঁর সঙ্গে। মূর্তি তৈরির কাজ শেষের মুখে দাঁড়িয়েও এখন স্বস্তি নেই। একে একে প্রতিমা যাচ্ছে মণ্ডপে। পরশু থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে। ঠাকুর একে একে পৌঁছে যাচ্ছে লেবুতলা, সল্টলেকের মণ্ডপগুলিতে। এখন ধীরে ধীরে ঘর খালি হওয়ার সময়।