আর্ট কলেজ-বুটিক পেরিয়ে পুজোর ভাবনা, শিল্পী জীবনের ২৬ বছরে তিন পুজোর দায়িত্ব সুশান্তর কাঁধে
Durga Puja: এবছর ২৬। কলকাতার টালা প্রত্যয়, হতিবাগান সর্বজনীন এবং কেন্দুয়ার পুজো পরিকল্পনা করেছেন তিনিই। প্রবল ব্যস্ততার মাঝেই আজকাল ডট ইন-এর সঙ্গে কথা বললেন শিল্পী সুশান্ত পাল।
রিয়া পাত্র
২০২৩ সালের দুর্গাপুজো। খাস কলকাতায় যে কয়েকটি পুজো মণ্ডপ নজর কেড়েছিল সামগ্রিক ভাবনায়, সেগুলির মধ্যে অন্যতম টালা প্রত্যয়। ব্যাপক সমাদর পেয়েছিল ওই পুজো। আর টালা প্রত্যয়ের ‘কহন’ ছিল যাঁর ভাবনা, সেই শিল্পীর শিল্প জীবনের ২৫ বছরের ৫০ তম পুজোর ছিল সেটি।
এবছর ২৬। কলকাতার টালা প্রত্যয়, হতিবাগান সর্বজনীন এবং কেন্দুয়ার পুজো পরিকল্পনা করেছেন তিনিই। প্রবল ব্যস্ততার মাঝেই আজকাল ডট ইন-এর সঙ্গে কথা বললেন শিল্পী সুশান্ত পাল।
বেড়ে উঠেছেন কসবার বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারে, 'যেখানে ছেলে-মেয়েরা বড় হয়ে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হবেন, উপার্জন করবেন, ভাবা হয়ে থাকে সাধারণত। শিল্প কেবল একটা হবি সেখানে। তার চর্চা-যাপন মানুষে জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে যেতে পারে, সেটা কেউ ভাবেন না।' কিন্তু ওই পরিবার থেকেই সব ভাবনা ভেঙে বেরিয়েছিলেন সুশান্ত।
কেমন ছিল শিল্পের পথে পা বাড়ানো? শিল্পী বলছেন, ‘পরিবারের আপত্তিতে প্রথম আঁকার স্কুলে ভর্তি হই ছোটবেলায়। জেঠুর সাহায্য পেয়েছিলাম। আসলে তিনিও যাত্রা-নাটক নিয়েই ছিলেন, কখনও পারিবারিক ব্যবসার অংশ হননি। শিল্পের আদান-প্রদান চলত তাঁর মনে, সেই কারণে তিনি পাশে ছিলেন। আমি তখন জানতামই না সরকারি আর্ট কলেজ আছে। সেখানে পড়া যায়।‘
তাহলে কীভাবে এই পথে আসা? হাতিবাগান সর্বজনীনের দিকে যেতে যেতেই ব্যস্ততার মধ্যে জানালেন, ‘আমার আঁকার শিক্ষক প্রথম বলেছিলেন বড় হয়ে চাইলে আঁকা নিয়েই পড়তে পারি। অরুণ সমাদ্দার বললেন, মাধ্যমিকের পর তা নিয়ে পড়তে। সেই প্রথম আর্ট কলেজের পাশে যাওয়া। লাল বাড়ির সঙ্গে পরিচয় হওয়া। টেক্সটাইল-ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনা করেছি।‘
সুশান্ত বলছেন, ‘প্রথমে ভাবনা ছিল পোশাক নিয়ে কাজ করার। তখন পোশাক সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে মানুষ। ওই সময়ে বুটিক তৈরি করি। সেটা জনপ্রিয় হয় খুব।‘
তারপর পুজোয় কীভাবে? জানালেন, ‘ওই সময় আরও একটা ঘটনা ঘটে। ১৯৮৫ থেকে কলকাতায় ওই বদল আসে। দুর্গা পুজোয় এশিয়ান পেইন্ট শারদ সম্মান পুরষ্কার দেওয়ার পর থেকেই একটা বদল আসে। অনেকেই তখন থেকেই প্রতিযোগিতার জন্য, নতুন ধরনের মণ্ডপ-প্রতিমার ভাবনা চাইলেন। আর্ট কলেজের পড়ুয়াদের চাহিদা বাড়তে শুরু করল।'
আর্ট কলেজ থেকে বেরনোর পর, ১৯৯৮ সালে বেহালা সহযাত্রী যেটা এখন বড়িশা, সেখানে কাজ করেন তিনি। ১৯৯৯ সাল -২০০০-২০০১ আর কাজ করেননি। কিন্তু তারপরেই বুঝলেন, পুজো তাঁকে কী অসম্ভব টানে। ব্যাস ফের ২০০৪-এ ফিরে আসা পুজোর কাজে। ততদিনে তিনি পরিচিত হয়েছেন পুজোর শিল্পী বলেও। এ বছর একসঙ্গে ভাবনা বাস্তবায়িত করছেন তিন পৃথক পুজো মণ্ডপের। বলছেন, ‘পুজোর কাজটা আসলে আমি এনজয় করি। ক্লান্তি আসে না।‘