পাটের তৈরি দুর্গা মূর্তি, চমক লাগলেন মুর্শিদাবাদের শিল্পী রাজেশ 

Durga Puja: ঐতিহ্যশালী পাটশিল্পকে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরার এক অভিনব প্রয়াস নিলেন মুর্শিদাবাদের মৃৎশিল্পী রাজেশ দাস।

Artist Rajesh Das made Durga Idol using jute in murshidabad

আজকাল ওয়েবডেস্ক: ঐতিহ্যশালী পাটশিল্পকে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরার এক অভিনব প্রয়াস নিলেন মুর্শিদাবাদের মৃৎশিল্পী রাজেশ দাস। এবার কান্দির বনিকপাড়া আগমনী সংঘ সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির জন্য তিনি তৈরি করলেন পাটের দুর্গা মূর্তি। 

পাটের বস্তা ও দড়ি দিয়ে তিনি মৃন্ময়ী মায়ের চিন্ময়ী রূপ তুলে ধরেছেন। প্রতিবছরই শিল্পী রাজেশ দাসের তৈরি প্রতিমার মধ্যে থাকে অভিনবত্ব। গত তিন মাস ধরে তিনি এই মূর্তি তৈরির কাজ করে চলেছেন। খুব শীঘ্রই তিনি প্রতিমা পাঠিয়ে দিতে চান পূজা মন্ডপে। 

শিল্পী রাজেশ দাস জানান, 'বর্তমানে পাট শিল্পের অবস্থা খুবই সঙ্গিন। ক্রমশ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বড় বড় পাটকলগুলো। তাই পাট চাষীরাও পাট চাষে উৎসাহ হারাচ্ছেন। এবছর পাটকে দুর্গা প্রতিমা তৈরির মূল উপকরণ হিসেবে আমি বেছে নিয়েছি কারণ মুর্শিদাবাদের ঐতিহ্যশালী পাট শিল্প যেন আবার পুরনো মর্যাদায় ফিরে আসতে পারে সেই উদ্দেশ্যেই।'

প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার পর দেশভাগের সময় পাট চাষের অধিকাংশ জমি চলে যায় বাংলাদেশের অংশে আর বেশিরভাগ পাটকলগুলো চলে আসে ভারতের দিকে অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে। মুর্শিদাবাদ জেলায় চাষীদের মধ্যে পাট চাষের আগ্রহ ছিল প্রবল। কিন্তু পাটজাত দ্রব্যের প্রতি মানুষের অনাগ্রহ, পাটের পরিবর্তে পলিথিনের ব্যবহার এবং পাট জাত দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে চাষিরা আগ্রহ হারাচ্ছেন পাট চাষে। 

শিল্পী রাজেশ দাস বলেন,''মুর্শিদাবাদ জেলার অর্থকরী ফসল হল পাট।কিন্তু পাটের দাম না পাওয়ায় চাষীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। পাট চাষীদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা নিয়েই আমার এই মূর্তি নির্মাণের ভাবনা।" ১২ বছর বয়সে মৃৎশিল্পী বাবার কাছে হাতেখড়ি রাজেশ দাসের। তারপর ২০১২ সালে বর্ধমান আর্ট কলেজ থেকে পাস করে নিজের মেধা ও সৃজনশীলতা দিয়ে তিনি নিত্য নতুন শিল্প সৃষ্টিতে নিযুক্ত হন। এর আগে ২০২২ সালে কাগজের দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে তিনি চমক লাগিয়ে দিয়েছিলেন দর্শনার্থীদের। শুধু তাই নয়, কাগজের টুকরো দিয়ে তৈরি গণেশ মূর্তি ও তিরুপতির মূর্তি নির্মাণ করে রাজ্য ও জেলা স্তরে পুরস্কৃত হয়েছেন রাজেশ। নাম উঠেছে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডেও । 

রাজেশ জানান ,"এই মূর্তি নির্মাণে কোনও কৃত্রিম রং ব্যবহার করা হয়নি। পাটের দড়ি বিশেষভাবে ব্যবহার করে প্রতিমা নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিমার অলঙ্কারও পাট দিয়ে তৈরী করা হয়েছে।"

রাজেশ দাস আরও বলেন,'"মুর্শিদাবাদের প্রচুর মহিলা পাট শিল্পের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু উপযুক্ত সুযোগ সুবিধার অভাবে তারা নিজেদের শিল্পসত্ত্বাকে তুলে ধরতে পারেন না। এমনকি বিভিন্ন মেলায় তাদের ভাগ্যে স্টল পর্যন্ত জোটে না। রাস্তায় বসেই তাদের শিল্প সম্ভার বিক্রি করতে হয়। আমি চাই এই সমস্ত পাট শিল্পীরা, বিশেষ করে মহিলারা যাতে তাদের শিল্প সম্ভারের যোগ্য সম্মান পায় এবং পাট শিল্পকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।' তিনি বলেন, "এই পাটজাত দ্রব্যের সঠিক মূল্য শিল্পীরা পায় না ঠিকই, কিন্তু শিল্পসত্ত্বাকে কখনই মূল্য দিয়ে বিচার করা যায় না। একটি শিল্প তৈরি করায় শিল্পীর মনের যে আনন্দ থাকে, শিল্পীর জন্য যথেষ্ট। তাই এই মূল্য বৃদ্ধির যুগে দাঁড়িয়েও আমি সকল পাট চাষী এবং শিল্পীদের আহ্বান করব তারা যেন মুর্শিদাবাদের এই ঐতিহ্যশালী পাট শিল্পকে নিয়ে আবার নতুন করে চিন্তা ভাবনা শুরু করেন।"

অন্যদিকে বনিকপাড়া আগমনী সংঘ সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সদস্য সুরজিৎ মিস্ত্রি বলেন ,"প্রতিমা নির্মাণে নতুনত্বের ভাবনা থেকে আমাদের এই উদ্যোগ। পাট দিয়ে তৈরী জিনিস পরিবেশ বান্ধব হলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে দিন দিন পাটের ব্যবহার কমছে। আমরা আশাবাদী আমাদের এই বছরের প্রতিমা সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সারা ফেলবে এবং পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা বাড়বে। "