সপ্তমীতে অন্নভোগ, অষ্টমীতে লুচি, নবমীর দিন খিচুড়ির সঙ্গে কচুর শাক! দুর্গাপূজায় পেটপুজোর রান্না শেখালেন বনেদি বাড়ির গৃহিণী

Durga Puja 2025: যাঁরা বাড়িতেই এই ক’দিন বাঙালি খাবারের স্বাদ পেতে চান, তাঁরাও স্বচ্ছন্দে বাড়িতে তৈরি করতে পারেন খাবারগুলি।

Make these Durga Pujo Bhogs at home

আজকাল ওয়েবডেস্ক: শহরের নানান বনেদি বাড়ির পুজোর মতোই বাংলার গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে রয়েছে নানান ঐতিহ্যশালী দুর্গাপুজো। তেমনই একটি পুজো নদীয়ার নাথ বাড়ির পুজো। বর্তমান প্রজন্মে যাঁরা পুজো করেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম শিখা দেবনাথ। পেশায় শিক্ষিকা শিখা জানান, বরাবরই তাঁদের পুজোর চারদিন চার রকমের বিশেষ ভোগ দেওয়া হয়। এই তিন দিনের ভোগ রান্না করা একদিকে যেমন ঐতিহ্য, তেমনই আনন্দের। যাঁরা বাড়িতেই এই ক’দিন বাঙালি খাবারের স্বাদ পেতে চান, তাঁরাও স্বচ্ছন্দে বাড়িতে তৈরি করতে পারেন খাবারগুলি। প্রতিটি পদের নিরামিষ (পেঁয়াজ-রসুন ছাড়া) রান্নার পদ্ধতি জানিয়ে দিলেন তিনি।


সপ্তমী: অন্নভোগ

সপ্তমীর ভোগে সাধারণত সাদা ভাতের সঙ্গে একটি ভাজা, ডাল এবং একটি তরকারি থাকে।
১. সাদা ভাত
পরিষ্কার করে ধোয়া গোবিন্দভোগ বা বাসমতী চাল পরিমাণ মতো জল ও সামান্য নুন দিয়ে ফুটিয়ে ভাত তৈরি করে নিন। গোবিন্দভোগ চাল ব্যবহার করলে একটি সুন্দর গন্ধ আসে।
২। সোনামুগের ডাল
উপকরণ
   * সোনামুগ ডাল: ১ কাপ
   * আদা বাটা: ১ চা চামচ
   * হলুদ গুঁড়ো: ১/২ চা চামচ
   * নুন ও চিনি: স্বাদমতো
   * ঘি: ২ টেবিল চামচ
   * গোটা জিরে: ১/২ চা চামচ
   * তেজপাতা: ১টি
   * শুকনো লঙ্কা: ১-২টি
   * গরম মশলা গুঁড়ো: ১/২ চা চামচ
 প্রণালী
   * প্রথমে কড়াইতে ডালটা সোনালী হওয়া পর্যন্ত শুকনো খোলায় ভেজে নিন।
   * ডাল ধুয়ে পরিমাণ মতো জল, নুন ও হলুদ দিয়ে সেদ্ধ করুন। ডাল গলে গেলেও যেন গোটা গোটা থাকে।
   * অন্য একটি কড়াইতে ঘি গরম করে তেজপাতা, শুকনো লঙ্কা ও গোটা জিরে ফোড়ন দিন।
   * ফোড়নের সুগন্ধ বেরোলে আদা বাটা দিয়ে সামান্য কষিয়ে নিন।
   * এরপর সেদ্ধ করে রাখা ডাল তাতে ঢেলে দিন।
   * স্বাদমতো চিনি যোগ করুন। ডাল ফুটে উঠলে গরম মশলা গুঁড়ো ছড়িয়ে নামিয়ে নিন।
৩। লাবড়া বা পাঁচমিশালি তরকারি
উপকরণ:
   * কুমড়ো, আলু, বেগুন, পটল, মুলো, কাঁচকলা (সবজি ছোট ছোট করে কাটা): মোট ২-৩ কাপ
   * আদা বাটা: ১ চা চামচ
   * হলুদ গুঁড়ো: ১ চা চামচ
   * জিরে গুঁড়ো: ১ চা চামচ
   * পাঁচফোড়ন: ১ চা চামচ
   * তেজপাতা: ১টি
   * শুকনো লঙ্কা: ২টি
   * সর্ষের তেল: ৩-৪ টেবিল চামচ
   * নুন ও চিনি: স্বাদমতো
   * ঘি ও গরম মশলা: সামান্য
প্রণালী
   * কড়াইতে তেল গরম করে প্রথমে আলু ও কাঁচকলা ভেজে তুলে নিন। তারপর বাকি সবজিগুলো হালকা ভেজে নিন।
   * ওই তেলেই পাঁচফোড়ন, তেজপাতা ও শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিন।
   * ফোড়নের গন্ধ বেরোলে আদা বাটা দিয়ে কষান।
   * এরপর হলুদ ও জিরে গুঁড়ো দিয়ে সামান্য জল দিয়ে মশলাটা কষিয়ে নিন।
   * মশলা থেকে তেল ছাড়লে ভাজা সবজিগুলো দিয়ে ভাল করে মেশান।
   * স্বাদমতো নুন ও চিনি দিয়ে ঢেকে দিন। প্রয়োজনে অল্প গরম জল দিতে পারেন।
   * সবজি সেদ্ধ হয়ে মাখা মাখা হয়ে গেলে শেষে ঘি ও গরম মশলা ছড়িয়ে নামিয়ে নিন।

অষ্টমী: লুচি ও ছোলার ডাল

অষ্টমীর সকালের ভোগ মানেই গরম গরম ফুলকো লুচি আর নারকেল দেওয়া ছোলার ডাল।
১। লুচি
উপকরণ
   * ময়দা: ২ কাপ
   * নুন: ১/২ চা চামচ
   * চিনি: ১ চা চামচ
   * সাদা তেল (ময়ান দেওয়ার জন্য): ২ টেবিল চামচ
   * ভাজার জন্য তেল: পরিমাণ মতো
   * ঈষদুষ্ণ জল: মাখার জন্য
প্রণালী
   * একটি পাত্রে ময়দা, নুন, চিনি ও ২ টেবিল চামচ তেল দিয়ে ভাল করে মেশান (ময়ান দিন)। ময়ান এমনভাবে দেবেন যাতে মুঠো করলে ময়দা দলা ধরে থাকে।
   * এবার অল্প অল্প করে ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে নরম করে ময়দাটা মেখে নিন।
   * মাখা ময়দার ওপর সামান্য তেল মাখিয়ে ৩০ মিনিট ঢেকে রাখুন।
   * এরপর ছোট ছোট লেচি কেটে গোল গোল লুচি বেলে নিন।
   * কড়াইতে তেল খুব ভালো করে গরম করে মাঝারি আঁচে লুচিগুলো সোনালী করে ভেজে তুলুন।
২। নারকেল দেওয়া ছোলার ডাল
উপকরণ
   * ছোলার ডাল: ১ কাপ (৪-৫ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখা)
   * নারকেল: ১/২ কাপ (ছোট ছোট টুকরো করে কাটা বা কোড়ানো)
   * আদা বাটা: ১ চা চামচ
   * হলুদ গুঁড়ো: ১/২ চা চামচ
   * জিরে গুঁড়ো: ১/২ চা চামচ
   * গোটা জিরে: ১/২ চা চামচ
   * তেজপাতা: ১টি
   * শুকনো লঙ্কা: ১-২টি
   * ঘি: ২ টেবিল চামচ
   * নুন ও চিনি: স্বাদমতো
   * গরম মশলা গুঁড়ো: ১/২ চা চামচ
প্রণালী
   * ভেজানো ছোলার ডাল পরিমাণ মতো জল ও নুন দিয়ে প্রেশার কুকারে সেদ্ধ করে নিন। ডাল সেদ্ধ হবে কিন্তু গলে যাবে না।
   * কড়াইতে ১ টেবিল চামচ ঘি গরম করে নারকেলের টুকরোগুলো সোনালী করে ভেজে তুলে রাখুন।
   * ওই কড়াইতেই বাকি ঘি দিয়ে তেজপাতা, শুকনো লঙ্কা ও গোটা জিরে ফোড়ন দিন।
   * ফোড়ন থেকে সুগন্ধ বেরলে আদা বাটা দিয়ে কষান।
   * এরপর হলুদ ও জিরেগুঁড়ো দিয়ে সামান্য জল ছিটিয়ে মশলা কষিয়ে নিন।
   * মশলা কষানো হলে সেদ্ধ ডাল ঢেলে দিন।
   * স্বাদমতো নুন ও বেশ খানিকটা চিনি দিন। এই ডাল একটু মিষ্টি স্বাদের হয়।
   * ডাল ফুটে উঠলে ভাজা নারকেল ও গরম মশলা গুঁড়ো ছড়িয়ে নামিয়ে নিন।

নবমী: খিচুড়ি ও কচুর শাক

নবমীর ভোগে গোবিন্দভোগ চালের খিচুড়ির সঙ্গে কচুর শাকের যুগলবন্দি অনবদ্য।
১। ভোগের খিচুড়ি
উপকরণ
   * গোবিন্দভোগ চাল: ১ কাপ
   * সোনামুগ ডাল: ১ কাপ
   * আলু, ফুলকপি, মটরশুঁটি, কুমড়ো: ইচ্ছামতো
   * আদা বাটা: ১.৫ টেবিল চামচ
   * হলুদ গুঁড়ো: ১ চা চামচ
   * জিরে গুঁড়ো: ১ চা চামচ
   * গোটা জিরে: ১ চা চামচ
   * তেজপাতা: ২টি
   * শুকনো লঙ্কা: ২টি
   * ঘি: ৩-৪ টেবিল চামচ
   * সর্ষের তেল: ২ টেবিল চামচ
   * নুন ও চিনি: স্বাদমতো
   * গরম মশলা গুঁড়ো: ১ চা চামচ
প্রণালী
   * মুগ ডাল শুকনো খোলায় ভেজে নিন। চাল ও ডাল ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখুন।
   * কড়াইতে তেল গরম করে সবজিগুলো নুন-হলুদ দিয়ে ভেজে তুলে নিন।
   * বড় হাঁড়িতে ঘি ও তেল গরম করে গোটা জিরে, তেজপাতা ও শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিন।
   * আদা বাটা, হলুদ ও জিরে গুঁড়ো দিয়ে মশলা কষিয়ে নিন।
   * এরপর চাল ও ডাল দিয়ে কয়েক মিনিট ভালো করে ভাজুন।
   * পরিমাণ মতো গরম জল (চাল-ডালের মিশ্রণের প্রায় দ্বিগুণ বা তার বেশি) দিন। স্বাদমতো নুন ও চিনি যোগ করুন।
   * চাল-ডাল অর্ধেক সেদ্ধ হয়ে এলে ভাজা সবজিগুলো দিয়ে দিন।
   * সবকিছু ভালোভাবে সেদ্ধ হয়ে গেলে এবং খিচুড়ি ঘন হয়ে এলে ওপরে গরম মশলা ও এক চামচ ঘি ছড়িয়ে নামিয়ে নিন।
২। কচুর শাক
উপকরণ
   * কচুর শাক: ১ আঁটি (ডাঁটাগুলো কেটে ধুয়ে রাখা)
   * ভেজানো ছোলা: ১/২ কাপ
   * নারকেল কোরা: ১/২ কাপ
   * কাঁচা লঙ্কা: ৩-৪টি (চেরা)
   * কালো জিরে: ১ চা চামচ
   * হলুদ গুঁড়ো: ১/২ চা চামচ
   * সর্ষের তেল: ৩ টেবিল চামচ
   * নুন ও চিনি: স্বাদমতো
   * তেঁতুলের ক্কাথ (ঐচ্ছিক): সামান্য (গলা ধরার ভয় থাকলে)
প্রণালী
   * প্রথমে কচুর শাক ও ছোলা একসাথে নুন ও সামান্য তেঁতুলের ক্কাথ দিয়ে সেদ্ধ করে জল ঝরিয়ে নিন।
   * সেদ্ধ করা শাক হাত দিয়ে বা ডাল-ঘুটনি দিয়ে ভালো করে ঘেঁটে নিন।
   * কড়াইতে সর্ষের তেল গরম করে কালো জিরে ও চেরা কাঁচালঙ্কা ফোড়ন দিন।
   * এবার সেদ্ধ করা শাক দিয়ে দিন। হলুদ, নুন ও চিনি দিয়ে ভালোভাবে নাড়তে থাকুন।
   * শাকের জল শুকিয়ে এলে এবং কড়াইয়ের গা ছেড়ে আসতে শুরু করলে নারকেল কোরা মিশিয়ে দিন।
   * আরও কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে জল পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে নামিয়ে নিন। তৈরি কচুর শাক।