প্রাচীনকালে বাংলার গৃহস্থের আরাধ্যা ছিলেনই না দেবী কালিকা
Kali Kahini : দীপান্বিতা অমাবস্যায় বাংলায় পুজিতা হন দেবী কালিকা। দশমহাবিদ্যার প্রথম বিদ্যা দেবী কালিকা ব্রহ্মময়ী। তিনি মহা-মহা ব্রহ্মবিদ্যা। পরমা প্রকৃতি বিশ্ব প্রসবিনী মা মহামায়ারই এক রূপ কালিকাই হলেন বঙ্গদেশের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। প্রাচীনকাল থেকেই বঙ্গদেশে কালী সাধনার রীতি প্রচলিত। তবে সুপ্রাচীন কালে বাংলার গৃহস্থের আরাধ্যা ছিলেন না দেবী কালিকা।
কালী কাহিনি: কার্তিক মাসের অমানিশায় আলোয় সেজে ওঠে চতুর্দিক। দীপান্বিতা অমাবস্যায় বাংলায় পুজিতা হন দেবী কালিকা। দশমহাবিদ্যার প্রথম বিদ্যা দেবী কালিকা ব্রহ্মময়ী। তিনি মহা-মহা ব্রহ্মবিদ্যা। পরমা প্রকৃতি বিশ্ব প্রসবিনী মা মহামায়ারই এক রূপ কালিকাই হলেন বঙ্গদেশের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। প্রাচীনকাল থেকেই বঙ্গদেশে কালী সাধনার রীতি প্রচলিত। তবে সুপ্রাচীন কালে বাংলার গৃহস্থের আরাধ্যা ছিলেন না দেবী কালিকা।
আসলে তন্ত্র সাধনার দেশ এই ভারত। তন্ত্র সাধনায় সবথেকে উল্লেখযোগ্য দেবী কালিকা। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পালেদের যুগেও বাংলা ছিল শক্তি আরাধনা ও তন্ত্রের পীঠস্থান।
একসময়ে বঙ্গীয় অধিবাসীদের সুখ, দুঃখ, জীবনের উত্থান পতন, আনন্দ উচ্ছাস এই সকল ব্যঞ্জনাই বিকশিত হত শক্তি আরাধনার মাধ্যমে।
পরবর্তী সময় বাংলায় বৈষ্ণব আন্দোলনের জোয়ার এলেও বাঙালির মনশীলতায় শক্তি আরাধণা প্রেম থেকেই যায়। ফলে অন্তরের স্বতঃস্ফূর্ততা ক্ষণে ক্ষণে বিকশিত হয়ে ধীরে ধীরে শক্তি আরাধনার পটভূমি হয়ে উঠতে থাকে বাংলা। দেবী কালী জগজ্জননী।
কালী কাহিনি - পর্ব ১
বাংলায় কখনও দেবী কৃষ্ণবর্ণা কখনও তিনি বাংলার ঘরের মেয়ে শ্যামা। কখনও তিনি দক্ষিণাকালী, শ্মশানকালী, ভদ্রকালী, রক্ষাকালী, গুহ্যকালী, মহাকালী, চামুণ্ডা। আবার বিভিন্ন মন্দিরে মণ্দিরে তিনিই "ব্রহ্মময়ী", "ভবতারিণী", "আনন্দময়ী", "করুণাময়ী"। তবে কালী নাম শুনলেই আজ দেবীর যে মুক্তকেশী, দিগম্বরী রূপ চোখের সামনে ভেসে ওঠে, সেই রূপে কিন্তু অতীতে দেবী কালিকার পূজা হত না।
তাঁর পূর্বে কালী উপাসকগণ তাম্রতটে ইষ্টদেবীর যন্ত্র এঁকে বা খোদাই করে পূজা করতেন। সনাতন ধর্মীয় শাস্ত্র অনুযায়ী, মা কালীর আবির্ভাব সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া যায়, তা হল পুরাকালে শুম্ভ-নিশুম্ভকে বধ করতে আবিভূর্তা হন আদ্যশক্তি মা মহামায়া। দেবীর শরীর কোষ থেকে অন্য এক দেবী সৃষ্টি হয় যা কৌশিকী নামে ভক্তদের কাছে পরিচিত হন। দেবী কৌশিকী মা মহামায়া দেহ থেকে নিঃসৃত হলে কালো বর্ণ ধারণ করে যা দেবী কালীর আদিরূপ বলে ধরা হয়।
এখন দীপাবলির অমাবস্যায় কালীপুজো সার্বজনীন হলেও শোনা যায়, পুরাকালে নরবলি দিয়ে দেবী কালিকার পুজো করত ডাকাতরা। পরবর্তী সময় তন্ত্র মতে আরাধ্যা দেবী কালীর পুজো শুরু হয় রাজবাড়ি ও জমিদার বাড়িতে। জনশ্রুতি, বাংলায় কালীপুজো প্রচলনকারীদের তালিকায় কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র অন্যতম। যদিও বেশিরভাগ গৃহস্থের বাড়িতে বা মণ্ডপে দেবী কালীর পুজো হয় সাধারণত অতান্ত্রিক ব্রাহ্মণ মতেই।