পুজোয় চলুন অচিনপুরে, ছুটিতে ঘুরতে যাওয়ার কিছু অফবিট গন্তব্যের রইল খোঁজ
Durga Puja 2025:
পরমা দাশগুপ্ত
পায়ের তলায় সর্ষে। বাঙালিকে নিয়ে এই বিশেষণ এতদিনে ক্লিশে। কে না জানে, ছুটি পেলেই ছুট দেওয়াটা বঙ্গসন্তানের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে! এহেন জনতার শ্রেষ্ঠ উৎসব যখন দোরগোড়ায়, তখন বেড়ানোর প্ল্যান না করলে কি চলে? পুজোর ছুটির মাস দেড়েক আগে দাঁড়িয়ে ঝটপট কাজটা সেরে ফেলাই ভাল।
ইদানীং চেনা, জনপ্রিয় ঠিকানার বাইরে বেরিয়ে অফবিট লোকেশনেই মন বসেছে বাঙালির। পুজোর ছুটিতেও বরং তাহলে যাওয়া যেতেই পারে এমন কিছু জায়গায়, যেখানে তুলনায় কম হবে ভিড়ভাট্টা। তেমনই কিছু গন্তব্যের হালহদিশ করা যাক
ডাকছে পাহাড়
পাহাড় মানেই উত্তরবাংলার ইতিউতি, সিকিম, কুলু-মানালি তো অনেক হল। এখনকার পরিস্থিতিতে কাশ্মীর যেতে খানিকটা ইতস্তত করছেন অনেকেই। এবার পুজোয় তার চেয়ে বরং চলুন অচেনা পাহাড়ি ছুটিতে। মধ্যপ্রদেশের পাঁচমারি যেমন। অক্টোবরের এই সময়টায় ‘সাতপুরার রানি’ বলে পরিচিত এই পাহাড়ি জনপদ তার মনোরম সবুজ সাজ, বি জলপ্রপাত, সুপ্রাচীন জটাশঙ্কর বা পাণ্ডব গুহা, আর ঝকঝকে আকাশ নিয়ে অপেক্ষায়। এ ছাড়া ধূপগড়ে ট্রেক করে যেতে পারেন সাতপুরার উচ্চতম অংশে কিংবা অপ্সরা বিহারের প্রাকৃতিক জলাশয় আর ছবির মতো জলপ্রপাতের সামনে আলসেমিতেই কেটে যাক দিনটা, সে আপনার ব্যাপার!
উত্তরাখণ্ডের অউলিও কম যায় নাকি। যত দূর চোখ যায়, বরফঢাকা চূড়াদের নিয়ে সগর্বে দাঁড়িয়ে হিমালয়। তার নীচে চোখজুড়োনো উপত্যকা আর গাছের দল। গার্সো বুগিয়ালের সবুজ গালিচায় মোড়া প্রান্তর, যোশীমঠের মন্দির, অউলি আর্টিফিশিয়াল লেকে নৌকাবিহার, রোপওয়ে থেকে পাখির চোখে পাহাড়-দর্শন কিংবা কুয়ারি পাস অথবা নন্দাদেবীতে ট্রেকিংয়ের রোমাঞ্চ— ছুটির খাতায় দেদার মজা!
সাগরে সোহাগে
দিঘা-মন্দারমণি এখন বাঙালির সাপ্তাহিক ছুটির ঠিকানা। পুরী, গোয়া? সে-ও তো বড্ড চেনা। এই পুজোয় তার চেয়ে চলুন এক্কেবারে অচিনপুরের সাগরপাড়ে। অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর। শুধু যে বালিতে বসে গা এলিয়েই কাটবে দিন, তা কিন্তু নয়। আশপাশেই আছে একাধিক ঐতিহাসিক গন্তব্য। আছে এশিয়ার সবচেয়ে বড় লঙ্কার বাজারও। অন্ধ্রপ্রদেশে গেলে ঘুরে আসুন চিরালা বিচেও। সৈকত ঘিরে থাকা ছোট্ট জনপদের আলসে মেজাজ, নির্জন বেলাভূমিতে কাটানো ছুটির স্বাদই আলাদা! অচেনা সৈকতের খোঁজে আরও একটু অন্য দিকে যাবেন? চলুন দমনের শান্ত সৈকতে। মন রোমাঞ্চ চাইলে আছে দেদার ওয়াটার স্পোর্টস। সেখান থেকেই ঘুরে আসতে পারেন দাদরা-নগর হাভেলি এবং দমন-দিউয়ের রাজধানী সিলভাসায়। একসময়ের পর্তুগিজ উপনিবেশের যত্রতত্র এখনও ফেলে আসা দিনের স্বাদ, ইতিহাসের গন্ধে ভরপুর। পুরনো গীর্জা, সাজানো বাগান, ট্রাইবাল মিউজিয়াম এবং দুধনি লেকের সৌন্দর্য— সবই কিন্তু দেখার মতো!
জংলা ছুটি
জঙ্গল বললেই বাঙালি দৌড়য় হাতের কাছের সুন্দরবন বা ডুয়ার্সে। দূরে যেতে চাইলে করবেট, কানহা, কাজিরাঙা কিংবা তাডোবায়। কিন্তু তার বাইরে একটু অন্য স্বাদের বাছাই করলে কেমন হয়? মন চাইছে বাঘ দেখতে? তা হলে বরং ঘুরে আসতে পারেন নীলগিরি টাইগার রিজার্ভের নগরহোল বা রাজীব গান্ধী ন্যাশনাল পার্ক থেকে। ছবির মতো পাহাড়, সবুজ বনের ফাঁকে ফাঁকে জলপ্রপাত, নদী, ঝিল বা ছোট্ট ছোট্ট ঝোরার সৌন্দর্য মন কাড়বে ঠিক।
আপনি কি পাখি-প্রেমী? তা হলে যেতে পারেন রাজস্থানের ভরতপুরে। ইউনেস্কো ওয়ার্লড হেরিটেজ সাইট, কেওলাদেও ন্যাশনাল পার্কের অন্তর্গত এই জঙ্গলে আপনার অপেক্ষায় থাকবে নানা আকার, হরেক রঙের, বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দল। পেশাদার গাইড আপনাকে ঠিক তাদের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেবে!
শেষপাত
তবে হ্যাঁ, যেখানেই বেড়াতে যান, কিছু বিশেষ দিকে নজর দেওয়া জরুরি-
• গন্তব্যের ধরন, আবহাওয়া বা পরিবেশের কথা মাথায় রেখে পোশাক নিন।
• অফবিট জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার আগে সে জায়গাটা সম্পর্কে, তার পর্যটন, ইতিহাস বা দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে একটু পড়াশোনা করে নেওয়া ভাল।
• প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, দরকারি নথি তালিকা মিলিয়ে সঙ্গে নিন।
• ইদানীং সব জায়গাতেই অনলাইন পেমেন্ট বা ইউপিআইয়ের সুবিধে মেলে। তবে আপৎকালীন পরিস্থিতির কথা মাথা রেখে অবশ্যি কিছুটা নগদ টাকা সঙ্গে রাখুন।
• হোটেল বা হোমস্টে বাছাইয়ের ক্ষেত্রে একটু সতর্ক হয়ে তার বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া বা রিভিউ পড়তে ভুলবেন না।
পুজোর ছুটিতে তারপর শুধু আনন্দ আর আনন্দ!